অর্ঘ্য বিশ্বাস, ক্রান্তি
বৈশাখের রোদে জল কমতে শুরু করেছে নদী-নালায়। বুনোদের তৃষ্ণা মেটাতে জলপাইগুড়ির ক্রান্তি ব্লকের ষোলোঘরিয়া বনবস্তিতে পুকুর সংস্কার শুরু করেছেন বিমল শৈব্য। পুকুরে জল ধরে রাখতে সেটির সংস্কারের কাজে নিজেই মাঠে নেমেছেন। বিকেল গড়াতেই আপালচাঁদ ও তারঘেরা রেঞ্জ। থেকে বেরিয়ে এই পুকুরে গা ভেজাতে আসে হাতির দল। সেই সঙ্গে ময়ূর, হরিণ, বাঁদর এমনকী, লেপার্ড-সহ নানা ছোটো-বড় বন্যদেরও এখানে সারাদিন ধরে দেখা মেলে। প্রচণ্ড গরমে ওদের যেন জলকষ্ট না হয় তাই এইআয়োজন।
সালটা ১৯৮৩। ক্রান্তির সীমানা ঘেঁষা কাঠামবাড়ি জঙ্গল লাগোয়া এলাকার ষোলোঘরিয়া বনবস্তিতে কয়েক বিঘা জমির উপরে গড়ে তোলা হয়েছিল এই জলাশয়। পরে সেটিকে বনবস্তিবাসীকে পাট্টা দেওয়া হয়। তখন পুকুরে মাছ চাষ করা শুরু করেন এলাকার মানুষজন। তবে সারা বছর তাতে জল না থাকায় কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায় মাছ চাষ। কিন্তু জলাশয়টিকে অকেজো হতে দেননি বিমল। নিজের উদ্যোগেই পুকুরটির একাংশ পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে শীতের মরশুম থেকে চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত জল ধরে রাখতে সংস্কার করেন। আবার বর্ষায় জলে ভরে উঠলে পুকুরে অল্পস্বল্প মাছ চাষও করেন তিনি। একবার তিনি দেখেছিলেন, তপ্ত দুপুরে একপাল হাতি জলাশয়ে নেমে স্নান করছে। তখনই স্থির করেন ওদের আরামের জন্য পুকুরে বছরভর জলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিমলের কথায়, 'গত কয়েক বছর ধরেই নিয়ম করে সকাল-বিকেল হরিণ, বাঁদর, হাতি, ময়ূর-সহ ঝাঁকে ঝাঁকে বহু পাখি এখানে এসে তাদের তেষ্টা মেটায়। ওদের আমি কখনও বিরক্ত করি না।'
তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদার বলেন, 'চৈত্র-বৈশাখে বুনোদের সবচেয়ে জলের সমস্যা হয়। আপালচাঁদ ও তারঘেরা এলাকার বন্যপ্রাণের জলের ভরসা বলতে তিস্তা কিংবা চেল নদী। তা ছাড়া গত কয়েকদিনে লাগাতার বনে আগুন লাগার ঘটনায় বন্যপ্রাণীরা ভীত। এর মাঝে বিমলের এই প্রয়াস সত্যি প্রশংসনীয়।' জল শুকিয়ে যাওয়ার মরশুমে পাম্পের মাধ্যমে পুকুরে জলের যোগান দেন বিমল। জল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নিজেই সাফাইয়ের কাজ করেন। বন্যদের আসা যাওয়ার পথে যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না-হয় সেদিকও তাঁর লক্ষ্য থাকে বারোমাস। ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায় বলেন, 'বিমলের এই উদ্যোগের তুলনা হয় না। আগামী দিনে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে পুকুর সংস্কার করা হবে।'