• মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ‘ভরসা নেই’, স্পষ্ট বক্তব্য চাকরিহারাদের
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    মুখ্যমন্ত্রীর অভয়বাণীতেও ভরসা রাখতে পারছেন না চাকরিহারা শিক্ষকেরা। মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে সরকারি পরষেবা প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিষ্কার বলছি, কেন বসে আছেন গরমের মধ্যে? আপনারা স্কুলে যান। আমি তো আপনাদের বলেছি। বেতন পাবেন।’ কিন্তু তাঁর এই আবেদনে সাড়া দিতে নারাজ চাকরিহারাদের একটা বড় অংশ। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, এ দিন শিক্ষা দপ্তর থেকে সব জেলা দপ্তরে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই যোগ্য–অযোগ্যদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এই খবর জানার পরেও চাকরিহারা শিক্ষকদের স্পষ্ট বার্তা, ওই তালিকা প্রকাশ এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে যাবেন না তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি বা বেতন নয়, তাঁরা চান স্থায়ী সমাধান।

    যোগ্য শিক্ষক অধিকার মঞ্চের রাজ্য কনভেনর সঙ্গীতা সাহা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ও–রকম কথা অনেকবার বলেছেন। এখন ওই কথায় ভরসা রাখা যায় না। আমরা বুঝতে পারছি না কেন বিষয়টাকে এত ঘোরাতে চাইছেন। যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করে দিলেই তো অনেকটা কাজ হয়ে যাবে। আমরাও তো জানতে চাই, কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য। যতক্ষণ না আলাদা করা হচ্ছে এবং আমাদের চাকরির নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। আমাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি নয়, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির নিশ্চয়তা চাই।’

    পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ব্যানার্জীডাঙ্গা হাইস্কুলের চাকরিহারা গণিতের শিক্ষিকা আতেকা বানু বলেন, ‘মঙ্গলবার কলকাতার স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে বসেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি। মুখ্যমন্ত্রী অনেকবার এ–রকম ললিপপ দেখিয়েছেন। আমরা আর মুখ্যমন্ত্রীর ললিপপ মুখে নিচ্ছি না। উনি শুধু ওঁর শিক্ষা দপ্তরকে বলে দিন যোগ্য–অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করে দিতে। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা স্কুলে যাব না।’

    পশ্চিম মেদিনীপুর সবং ব্লকের দেউলি কলসবাড় রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের রসায়নের চাকরিহারা শিক্ষক কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী কলকাতার এসএসসি অফিসের সামনে থেকে ফোনে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যা–ই বলুন, সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্কুলে যাচ্ছি না। আন্দোলন চলবে। ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) শিক্ষা দপ্তর সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলে দিলেই তো সব মিটে যাবে। ওঁকে আমাদের বেতন নিয়ে ভাবতে হবে না।’ কেশপুরের গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের জীবন বিজ্ঞানের চাকরিহারা শিক্ষিকা লিপিকা প্রহরাজ বলেন, ‘আমরা চাইছি স্কুলে যেতে। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল। আন্দোলন চলছে, আলোচনাও চলছে। মুখ্যমন্ত্রীও বলছেন। আমাদের আশা, যোগ্য শিক্ষকদের কিছু একটা সুরাহা হবে! পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’

    শালবনির মৌপাল স্কুলে প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়া বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে স্কুলভিত্তিক যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা স্কুলে স্কুলে জানিয়ে দেবেন। কী নির্দেশ আসে আমরা সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’ গোয়ালতোড়ের পিংবনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার স্কুলের ৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। তবে শিক্ষা দপ্তর থেকে তালিকা দিলে সবাই পরিষ্কার হয়ে যাবেন। এখন তালিকা আসার অপেক্ষায় আছি।’

    পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামান্তকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

  • Link to this news (এই সময়)