• বৈসরন ভ্যালিতে ঘোরা বাতিল হওয়ায় প্রাণরক্ষা বাঘাযতীনের পর্যটকদের
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • পহেলগামের কাছে রামবান এলাকায় ধস নামার পর ঠিক হয়েছিল বৈসরন ভ্যালিতে বেড়াতে যাবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। আর তাতেই অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেন কলকাতার বাঘাযতীনের পর্যটকরা। ভূস্বর্গে বেড়াতে গিয়ে যে এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে তা এখনও ভাবতে পারছেন না কলকাতার বাঘাযতীনের পিয়া ঘোষ। পরিকল্পনা বাতিল না হলে তাঁরাও আজকে খবরের শিরোনামে চলে আসতেন, সে কথাই বারবার মনে পড়ছে পিয়ার।

    গত ১২ এপ্রিল কলকাতার বাঘাযতীন এলাকার ১০ জনের একটি দল কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। ওই দলে রয়েছেন তিনজন মহিলা ও দু’জন শিশু। দু’জন শিশুর মধ্যে একজনের বয়স দু’বছর ও অন্য জন পাঁচ বছরের। ভূস্বর্গ ভ্রমণ করে সকলের ফেরার কথা ছিল ২০ এপ্রিল। কিন্তু পহেলগাম থেকে ৮০ কিলোমিটার আগে রামবান এলাকায় ৯ কিমি রাস্তা জুড়ে ধস নামে। এর জেরে তাঁরা সকলেই পহেলগামের হোটেলে আটকে যান। কিন্তু ঘুরতে এসে হোটেলে বসে থাকতে চাননি তাঁরা। তাই সেখান থেকে বৈসরন ভ্যালি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে সেই পরিকল্পনাও বাতিল হয়। এর পরে মুঘল রোড হয়ে যে জম্মু ফেরা যায়, তা জানতে পেরে তাঁরা হোটেল থেকে সেই পথেই রওনা দেন।

    ১০ জনের দলের একজন সদস্য পিয়া ঘোষ বলেন, ‘২২ এপ্রিল বৈসরন ভ্যালি যেখানে জঙ্গি হামলা হয়েছে, সেখানে আমাদের বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে থাকলে আমরাও হয়তো আজকে সংবাদের শিরোনাম হতাম। কিন্তু ভগবানের অসীম কৃপা যে আমরা সেখানে বেড়াতে যাইনি। হোটেলের ম্যানেজারের কথা শুনে ২২ এপ্রিল সকালে মুঘল রোড হয়ে ৪৫০ কিমি পথ গাড়িতে পাড়ি দিয়ে ২৩ এপ্রিল ভোরবেলা জম্মু পৌঁছই।’

    তার আগে তাঁরা মোবাইল ফোনে তৎকাল পদ্ধতিতে হাওড়া ফেরার টিকিট কাটেন। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার রাতে তাঁদের জম্মু স্টেশন থেকে ট্রেন রয়েছে। কিন্তু এ দিন ভোরবেলা জম্মু স্টেশনে ঢুকতেই রেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাধা দেন। তাঁরা রেল কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁদের কাছে হাওড়া যাওয়ার তৎকাল টিকিট রয়েছে। এর পর তাঁরা জম্মু স্টেশন লাগোয়া বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের ধর্মশালাতে চার তলার একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ওঠেন।

    পিয়া বলেন, ‘এলাকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। এমনকি ফুটপাথের দোকানও খোলা নেই। দুপুরের খাবার খাব তার কোনও উপায় নেই। এই অবস্থায় মন্দির কর্তৃপক্ষ যে লঙ্গরখানা খুলেছে, সেখানেই দাঁড়িয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। এ দিকে সকাল সাড়ে ৮টার হাওড়াগামী হামসফর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। সুযোগ বুঝে বিমান ভাড়া এক লাফে বেড়ে গিয়েছে। ধস নামার পরে যাত্রী পিছু যে বিমান ভাড়া ছিল ১৪-১৬ হাজার টাকা, জঙ্গি হামলার পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২-২৪ হাজার টাকা।’

    কলকাতার বাঘাযতীনের পিয়া-সহ সেই দলের বাকিরা জানাচ্ছেন যতক্ষণ না বুধবার রাতের ট্রেন ছাড়ছে, ততক্ষণ তাঁরা কেউই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তাঁরা সকলেই এখন যে কোনও উপায়ে প্রাণ বাঁচিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরতে চাইছেন।

  • Link to this news (এই সময়)