সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: সন্ত্রাসের আতঙ্কে কাটিয়ে সবেমাত্র ছন্দে ফিরছিল কাশ্মীর। ফের বেড়ানোর ডেস্টিনেশন হিসেবে পর্য়টকদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছিল সবুজে মোড়া ভূস্বর্গ। কিন্তু মঙ্গলবারের দুপুরে রক্তস্নাত হওয়ার পর সেই স্বর্গ হয়ে উঠেছে নরক! প্রাণ গিয়েছে ২৬ জনের। ‘টার্গেট কিলিং’-এর পর থেকেই পর্যটকদের তালিকা থেকে বাদ পড়তে শুরু করেছে কাশ্মীর। একের পর এক পর্যটন সংস্থা বাতিল করছে কাশ্মীর বেড়ানোর প্যাকেজগুলি। পর্যটকরাও আতঙ্কে ভুগছেন। আগে থেকে ঠিক করে রাখার পরও সংশয়ে ভুগতে হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও অনেকেই বাতিল করে দিচ্ছেন কাশ্মীর বেড়ানোর পরিকল্পনা। সবমিলিয়ে ফের একবার কাশ্মীরের পর্যটনে সন্ত্রাসের করাল ছায়া।
কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু মানুষকে বেড়াতে নিয়ে যায় বহু পুরনো পর্যটন সংস্থা কুণ্ডু স্পেশাল। বছরে একাধিকবার কাশ্মীরে ট্রিপ করায় তারা। পহেলগাঁও হত্যালীলার পর বুধবার ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন’-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাদের সঙ্গে। সংস্থার কাউন্টার স্টাফ অনন্যা সরকার জানান, “এখন আমাদের প্রায় ৪০ জন কাশ্মীরে রয়েছেন। তাদের সুরক্ষিতভাবে ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। আগামী কাল একটি গ্রুপকে নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। এই পরিস্থিতিতে আমরা সেই ট্রিপ বাতিল করছি।” বদলে হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, ভুটানে বেড়াতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে তারা। ব্যান্ডেলের এক পর্যটন সংস্থার কর্ণধার গোপাল চাকি জানান,”আমি দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের নিয়ে কাশ্মীর সফরে যাই। কিন্তু গতকালের ঘটনাটি অনেক পর্যটকের মনেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ পর্যটক তাঁদের সফর বাতিল করেছেন।” প্রায় একই কথা শোনা গেল দত্তপুকুরের এক পর্যটন সংস্থার এজেন্ট নিলাদ্রির রায়ের গলাতেও। তিনি জানাচ্ছেন, ২৬ এপ্রিল এবং মে মাসের ১, ২ এবং ৩ তারিখ কাশ্মীর ট্রিপ ছিল। বলছেন, “যাঁদের বেড়াতে নিয়ে যাই তাঁরা আমাদের কাছে নিজের পরিবারের মতো। তাঁদের নিরাপত্তা সবার আগে। তাই ২৬ তারিখ যাদের শ্রীনগর থেকে পিক আপ করা কথা ছিল তাঁদের হোল্ডে রেখেছি। আগে পরিস্থিতি দেখি তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। জীবন থাকলে আবার বেড়াতে যাওয়া যাবে।” অনেক পর্যটক নিজে থেকেই বেড়ানো বাতিল করছেন বলে জানালেন নিলাদ্রিবাবু। বদলে শিমলা-মানালি বা সিকিম বেড়াতে যেতে চাইছেন।
দত্তপুকুরের বাসিন্দা সঞ্জয় মিত্রের এই সপ্তাহেই কাশ্মীর রওনা দেওয়ার কথা ছিল। শনিবার শ্রীনগর পৌঁছনোর কথা ছিল বিমানে। তিনি বলছেন, “১০ জনের জন্য যাতায়াতের বিমান ভাড়া ২ লক্ষ টাকা প্রায়। ভূস্বর্গের সফর বাতিল হয়ে গেলে যাতায়াতের খরচ-সহ বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তায়।” তাই এবার ভয়ংকর ভূস্বর্গে বেড়াতে যাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে এখনও দোটানায় সঞ্জয়বাবুর মতো বহু পর্যটক। শুধু কাশ্মীর নয়, চিন্তা বেড়েছে অমরনাথ যাত্রা নিয়েও। পুরুলিয়ার একটি পর্যটন সংস্থায় ২০০ জন নাম রেজিস্টার করেছেন অমরনাথ যাওয়ার জন্য। সেই সংস্থার এজেন্ট মিলন দত্ত জানান, নাম রেজিস্টার করিয়েছেন অনেকেই। তবে এই যাত্রা হবে কি না তা নিয়ে এখনও খবর নেই।