নিরাপত্তায় গলদ ছিল, আরেকটু হলে মারা যেতাম! পহেলগাঁওয়ের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা শোনালেন সল্টলেকের বাঙালি
প্রতিদিন | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
রমেন দাস: আবারও থমথমে উপত্যকা। পহেলগাঁওয়ের নৃশংস ঘটনার পর শুরু হয়েছে বিতর্কও। ফের শিরোনামে ধর্মের ভিত্তিতে মৃত্যুর হাহাকার! ঘটনাস্থলে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টার অভিযোগে সরব বিরোধীরাও। কিন্তু এর মধ্যেই উঠে এসেছে একাধিক প্রশ্ন। এতবড় ঘটনার কোনও আঁচ কেন পেল না গোয়েন্দা বিভাগ, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ঠিক এই আবহেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে শ্রীনগর থেকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বাঙালি পর্যটক মণিরুল মোল্লা।
সল্টলেকের ওই বাসিন্দা ১৭ এপ্রিল কাশ্মীর যান। অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। মনিরুল মোল্লার কথায়,”সবকিছু ঠিক ছিল। আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিলাম। সোনমার্গ গিয়েছি। কিন্তু ২১ এপ্রিল আমি আর আমার স্ত্রী পহেলগাঁওয়ে আসি। সেখানে এসেও খুব একটা কিছু সমস্যার দেখিনি।” তাঁর কথায়, “কিন্তু ২২ এপ্রিল অর্থাৎ যেদিন এই ঘটনাটি ঘটে আমি এবং আমার স্ত্রী ওই স্পট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে। দুপুর দুটো-আড়াইটা বাজে। আমরা বৈসারন ভ্যালির একদম কাছেই ঘুরছি। এমন সময় দেখছি। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। যাঁরা ঘোড়া নিয়ে থাকেন ওই এলাকায়। তাঁরাও পালাচ্ছেন। শুনতে পেলাম জঙ্গিহানা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন ২ জন, কেউ বলছেন ৩ জন মারা গিয়েছেন!” মণিরুল বলেন,”ওই সময়ে আমি ভ্যালির ওইদিকে যাচ্ছিলাম। আমার স্ত্রী কেন জানি না, বলেন, যেও না। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি। আমিও মারা যেতাম একটু এগোলেই।” সল্টলেকের ওই বাসিন্দা বলছেন,”চারিদিকে যেন রক্ত। নিস্তব্ধ। চাপা কান্না আওয়াজ। সে যে কী ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। ভয়ে কাঁপছিলাম। আর একটু হলেই মারা যেতাম এটা ভেবে!”
কিন্তু জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দুদের মেরেছে? প্রশ্নের জবাবে ওই পর্যটক বলেন, “সেটা তো সেই মুহূর্তে বুঝিনি। আসলে তো সবার আগে মানুষ। জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের কোনও ধর্মের চেয়ে, ওরা তো মানুষের শত্রু! আমি থাকলেও তো মেরে দিত!” তিন বাঙালির মৃত্যুতে শ্রীনগরের হোটেলে বসেই প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় তাঁর উত্তর,”এর চেয়ে কষ্টের কিছু হয়, ওঁরা ঘুরতে গিয়েছিলেন। ইস, ভাবতেও পারছি না। আমার বাংলায় তো এসব দেখিনি। এমন অভিজ্ঞতায় আমি এখনও বিস্মিত!”
ঘটনাস্থলে নিরাপত্তায় গলদ নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে। যদিও মনিরুল মোল্লা বলছেন, “আমি সোনমার্গ বা যেখানে গিয়েছে, সেনাবাহিনী সজাগ। কড়া নিরাপত্তা। কিন্তু ২১ তারিখ পহেলগাঁওয়ে পৌঁছে, আগের মতো দেখিনি। যেমন অন্যত্র দেখেছিলাম।” আগামী বৃহস্পতিবার কলকাতা ফিরবেন তাঁরা। এই মুহূর্তে পহেলগাঁও থেকে প্রায় সমস্ত পর্যটককে বের করা হয়েছে। অধিকাংশকেই পাঠানো হয়েছে শ্রীনগরে।