• শিক্ষকদের অবস্থানে শামিল হয়ে সঙ্গে থাকার বার্তা জুনিয়র চিকিৎসকদের
    আনন্দবাজার | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ঘটনা আলাদা, কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই সংগঠিত আন্দোলনের দাবি প্রকারান্তরে এক। তা হল, ‘ন্যায় বিচার’। সেই সূত্রেই সোমবার রাতে সল্টলেকে এসএসসি-র অফিসের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থানে শামিল হলেন ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর সদস্যেরা। যাঁরা বলছেন, আর জি করের ঘটনার নেপথ্যে প্রকৃত সত্য কী, তা জানার ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে লড়াই চলছে। আর শিক্ষকেরা যোগ্য-অযোগ্যের তালিকার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। অর্থাৎ, ন্যায় বিচারের লড়াইয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা যৌথ ভাবে বৃহৎ গণ আন্দোলনের মঞ্চ তৈরি করেছে।

    শিক্ষকদের আন্দোলনে তাঁরা পাশে থাকবেন বলে দিনকয়েক আগেই ঘোষণা করেছিলেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। তাই সোমবার দুপুর থেকে তাঁরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছিলেন। সন্ধ্যার পর থেকে এসএসসি-র অফিসের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবস্থানে বসতেই সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আর জি কর আন্দোলনের মুখ অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার, আশফাকউল্লা নাইয়া, অগ্নিবীণ কুণ্ডুরা। অনিকেত বলেন, ‘‘যে কোনও ন্যায়সঙ্গত গণ আন্দোলনেই জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট সব সময়ে থাকবে।’’

    আর জি করের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়ে এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রতিবাদে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। টানা ১০ দিন চলেছিল সেই অবস্থান। সেই স্মৃতি উস্কে দিয়েই সোমবার রাত ১২টা নাগাদ স্বাস্থ্য ভবন থেকে মেরেকেটে দেড় কিলোমিটার দূরে এসএসসি ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওই জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং আর জি করের কিছু পড়ুয়াও। শিক্ষকদের সঙ্গেই গলা মিলিয়ে ওই জুনিয়র চিকিৎসকেরা দাবি তুলেছেন, সুস্পষ্ট ভাবে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। মিরর ইমেজের যে দাবি তোলা হয়েছে, তা-ও মানতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। অনিকেতের অভিযোগ, ‘‘স্কুলশিক্ষা আজ ধ্বংসের মুখে। তাই আজ যদি প্রতিবাদ না হয়, যোগ্য শিক্ষকদের স্কুলে ফেরানো না যায়, তা হলে আগামী দিনে আরও সন্দীপ ঘোষ, সঞ্জয় রায় তৈরি হবে।’’

    আর জি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালবাজার থেকে স্বাস্থ্য ভবন ও ধর্মতলায় অসংখ্য রাত অবস্থান-অনশন করে আন্দোলন চালিয়েছে ফ্রন্ট। রাত জাগার অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহমর্মী হয়ে অবস্থানে শামিলদের জন্য খাবার ও জলের ব্যবস্থা করেন দেবাশিসেরা। রাত গভীর হলেও, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছোট গাড়িতে পৌঁছে যায় প্রায় ৩০০ জনের খিচুড়ি। তবে, বায়ো-টয়লেটের ব্যবস্থার জন্য তাঁরা কথাবার্তা বললেও, পুলিশি হয়রানির ভয়ে সরবরাহকারী সংস্থার তরফে তা শেষ পর্যন্ত পাঠানো সম্ভব হয়নি বলেই দাবি জুনিয়র চিকিৎসকদের। রাতভর সেখানে কাটিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ফিরে আসেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। প্রতিদিনই তাঁরা অবস্থানে যাবেন। মঙ্গলবারও ফ্রন্টের তরফে জনা কুড়ি সদস্য যান শিক্ষকদের অবস্থান মঞ্চে। করা হয়েছে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পও।

    রাতের পর রাত জেগে কাটানো তাঁদের আন্দোলনের দিনগুলি প্রতি মুহূর্তে চোখের সামনে ফিরে আসছে বলে জানান আশফাকউল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য প্রশাসন আসবে, যাবে। কিন্তু রাজ্যটা থেকে যাবে। তাই ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঠিক করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে পথে নামতেই হবে।’’ আর জি করের ঘটনাকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের উত্তর আজও সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট দিতে পারেনি। শিক্ষকদের সামনেও স্পষ্ট নয়, কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য। ফ্রন্ট সদস্যেরা প্রশ্ন তুলছেন, মানুষের হিতে কাজ করাই চিকিৎসক-শিক্ষকদের একমাত্র লক্ষ্য। সেখানে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, নগরপাল, এসএসসি-র চেয়ারম্যান, সিবিআই, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্টের মুখোমুখি হয়ে লড়তে হবে কেন? তবে জুনিয়র চিকিৎসকদের এটাও দাবি, ‘‘ভেঙে পড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থা ঠিক করতে গণ আন্দোলনই একমাত্র পথ।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)