সন্ধ্যা নেমেছে। জাতীয় পতাকা হাতে নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত বহু মানুষ। উপস্থিত কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম, বঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী। শোকের আবহে কলকাতায় এসে পৌঁছল কফিনবন্দি দু’টি দেহ। সন্ত্রাস-ধ্বস্ত কাশ্মীর থেকে কলকাতায় ফিরল সমীর গুহ ও বিতান অধিকারীর দেহ।
মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে ২৮ জন পর্যটকের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তিন বঙ্গ সন্তানও। এই তিন জনের মধ্যে দু’জনের বাড়ি কলকাতায়। গত ১৬ এপ্রিল স্ত্রী শর্বরী গুহ ও মেয়ে শুভাঙ্গীকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ। বুধবারই তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। বুধবারই ফিরলেন সমীর। তবে কফিনবন্দি হয়ে। সখেরবাজারের বাড়িতে তাঁর দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সমীরের স্ত্রী ও মেয়ে-সহ পরিজনরা।
শোকের একই ছবি ধরা পড়েছে বৈষ্ণবঘাটা পাটুলিতে বিতান অধিকারীর বাড়িতেও। কর্মসূত্রে ফ্লোরিডায় থাকতেন বিতান। ছুটিতে কলকাতায় এসে স্ত্রী সোহিনী অধিকারী ও আড়াই বছরের ছেলে রিদানকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের ফেরার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। একদিন আগেই কফিনবন্দি হয়ে কলকাতায় ফিরলেন বিতান। বুধবার রাত ৯টা নাগাদ কলকাতা পুরসভার গাড়িতে করে বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতে এসে পৌঁছয় বিতানের দেহ। তাঁর শেষ যাত্রায় অংশ নেন সাংসদ সায়নী ঘোষ-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রী। এ ছাড়াও বিতানের শেষ যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন শোকাহত পাড়া-প্রতিবেশিরা।
তবে এই শোকের আবহেও রাজনীতির কারবারিরা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করে গিয়েছেন। বিমানবন্দরে বিতানের স্ত্রী সোহিনীকে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি বলুন, হিন্দু বলে আপনার স্বামীকে মেরেছে।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে সোহিনী বলেন, ‘জঙ্গিরা আমায় এসে জিজ্ঞাসা করেছিল আপনি কি কলমা পড়তে পারেন? আমি না বলায় ছেলের সামনেই ওরা ওর বাবাকে মেরে ফেলল।’ শুভেন্দু অধিকারী ফের বলেন, ‘আপনি বলুন সেকুলারদের হিন্দু বলেই আপনার স্বামীকে মেরেছে।’ বিতানের ছেলেকে কোলে নিয়ে বঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘ওর দায়িত্ব আমার।’ এ দিন বিমানবন্দরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পলও।
তথ্য সহায়তায়: শ্যামগোপাল রায়