• ‘বর্তমান’-এর খবরের জের, নবরূপে নবদ্বীপের প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্র
    বর্তমান | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • সমীর সাহা, নবদ্বীপ: ‘বর্তমান’- এ প্রকাশিত খবরের জেরে নড়েচড়ে বসল রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর। নতুন ভাবে সেজে উঠছে নবদ্বীপের প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। ইতিমধ্যে হাসপাতাল চত্বরজুড়ে গজিয়ে ওঠা ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। নতুন করে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। বসেছে নতুন লোহার গেটও। হাসপাতালের বিল্ডিং থেকে শুরু করে কর্মচারীদের ঘরের চাঙর খসে পড়ছিল, সেগুলিও সারানো হয়েছে। গোটা হাসপাতাল বিল্ডিং সহ সীমানা প্রাচীর রং করার কাজ চলছে। ভাঙা কাঠের দরজা জানালা সমস্ত কিছু ঠিক করা হয়েছে। এতদিন হাসপাতালের আউটডোরে কোনও আলোর ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পানীয় জলের পাইপ লাইনগুলি সারানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা খরচ করে পিডব্লিউডি দপ্তরকে দিয়ে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নতুন করে সেজে ওঠায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পশুপ্রেমীরা।

    উল্লেখ্য, নবদ্বীপ প্রাণগোপাল নগরে প্রায় দু’ বিঘা জমির ওপর দীর্ঘদিনের পুরনো এই প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। ২০১৭ সালে এখানেই আধুনিক বহুমুখী প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। গত বছর ৭ জুন ‘বর্তমান’ কাগজে ‘নবদ্বীপের রাজ্য প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে’—খবরটি প্রকাশিত হয়। তারই ফলে আজকের এই রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের তোড়জোড়।

    ভেটেরনারি অফিসার সূর্য্যেন্দু সাহা বলেন,আমাদের স্টাফ কম। তা সত্ত্বেও আমরা সমস্ত রকম পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে সমস্ত গৃহপালিত পশুর চিকিৎসা করা হচ্ছে। সমস্ত রকমের অপারেশন এখানে করা হয়। বর্তমানে এক্স রে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। নেই টেকনিশিয়ানও। বাইরের অন্য কোনও ল্যাব থেকে পশুগুলির এক্স রে করিয়ে নিয়ে আসতে হয়। এখন এই হাসপাতালে দু’ জন চিকিৎসক এবং পাঁচজন গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছেন। তবে কোনও ফার্মাসিস্ট নেই। একটি ল্যাবরেটরি থাকলেও কোনও প্যাথলজিস্ট নেই। সমস্ত বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

    নবদ্বীপের এই প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে নদীয়া ও বর্ধমান দুই জেলারই বহু মানুষ তাঁদের পোষ্যদের চিকিৎসা করাতে এসে সমস্যার মুখে পড়তেন। তাঁদের দাবি, এখানে নতুন করে কর্মী নিয়োগ করা হোক।

    পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার বিশ্বরম্ভার বাসিন্দা শ্যামল দাস বলেন, আমার আড়াই মাসের বাছুরের পক্স হয়েছিল। ওকে নিয়ে আসা যায়নি, সেজন্য ছবি তুলে এনে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছি। এখন ভালো আছে।

    স্থানীয় পাঁচমাথার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা কর্মকার বলেন, কুকুরটাকে স্টেরিলাইজ করাতে নিয়ে এসেছি। আগের থেকে হাসপাতাল অনেকটাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে। 

    নৈশরক্ষী তারক নায়েক বলেন, ১৭ বছর ধরে নৈশরক্ষীর কাজ করছি। মাঝেমধ্যে আমাদের ঘরের চাঙর ভেঙে পড়ছিল। খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকতাম। এখন সেগুলি সারানো হচ্ছে। তাতে আমরা অনেকটাই নিরাপদবোধ করছি। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান নারায়ণ কর্মকার বলেন, এই হাসপাতালে নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, ধুবুলিয়া, নবদ্বীপ সংলগ্ন পূর্ব বর্ধমানের সমুদ্রগড়, বিদ্যানগর, বেলের হল্ট, কাটোয়া থেকে প্রচুর মানুষ তাদের পোষ্যকে চিকিৎসা করাতে আসেন। স্টাফ কম থাকার বিষয়টি আমরাও পঞ্চায়েত থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)