চাকরি থেকে অবসর নিলেও স্কুলে আসেন আউশগ্রামের অশিক্ষককর্মী
বর্তমান | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, মানকর: চাকরি থেকে অবসর নিলেও কর্তব্য থেকে অবসর নিতে পারেননি আউশগ্রামের বটগ্রাম এমএম হাইস্কুলের ক্লার্ক আকতারুল ইসলাম মণ্ডল। গত বছর ডিসেম্বরে অবসর নিলেও এখনও নিয়মিত স্কুলে আসছেন তিনি। আগের মতোই দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের কাজ করছেন। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষাকর্মী বলেন, যতদিন শরীর চলবে, ততদিন স্কুলে আসব। কর্মজীবনে প্রথম থেকেই এই স্কুলে ছিলাম। কাজে ঢুকেছিলাম ২০০৫ সালে। তারপরে এক টানা এতগুলি বছর এই স্কুলে কাটিয়েছি। স্কুল, সহকর্মী, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমার ভালবাসা জন্মে গিয়েছে। একটা অদ্ভুত টান অনুভব করি। সেই টানেই অবসরের পরেও ঘরে বসে থাকতে পারেনি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২৮১জন। স্থানীয় বটগ্রাম, কল্যাণপুর, ফতেপুর থেকে পড়ুয়ারা আসে। একজন টিআইসি-সহ বর্তমানে মোট ১০জন শিক্ষক আছেন। কিন্তু আকতারুল সাহেবের অবসরের পর ওই পদে নিয়োগ হয়নি। ফলে উনি অবসর নিলে কাজ কীভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের কপালে। তবে বিদ্যালয়ের কাজে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য উক্তা পিচকুড়ি থেকে বাইক চালিয়ে নিয়মিত আসছেন আকতারুলবাবু। যদিও শূন্যপদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বাড়িতে বাবা, স্ত্রী, পুত্র নিয়ে ভরা সংসার। তাঁর ছেলে সিদ্দিক মণ্ডল বলেন, অবসরের পরেও বাবা নিয়মিত স্কুলে গিয়ে কাজ করছেন। স্কুলের শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সকলে বাবাকে ভালোবাসেন। স্কুলের কাজে বাবা মানসিক শান্তি পান। বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক দেবারুণ দাস বলেন, স্কুলের কাজে ওঁকে ছাড়া ভাবা যায় না। নিজে থেকেই ভালোবেসে আসেন। এক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ে ক্লার্ক না থাকলে প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হয়। আকতারুল সাহেব সেই সমস্যা পূরণ করে দিয়েছেন। সেজন্য অবসরের পরেও ওঁর প্রতি পড়ুয়াদের ভালবাসা আর বর্তমান সহকর্মীদের সম্মান অটুট। বিদ্যালয়ের টিআইসি সুমন মণ্ডল বলেন, ওঁকে আমরা প্রাক্তন বলে মনেই করি না। আগের মতোই ঘড়ি ধরে স্কুলে আসেন। বিদ্যালয়ের কাজ হাসিমুখে করেন। এক শিক্ষক বলেন, এই সময় যখন সুপ্রিমকোর্টের রায়ে রাজ্যে শিক্ষাকর্মীদেরও চাকরি গিয়েছে, স্কুলে স্কুলে শিক্ষাকর্মীদের অভাব দেখা দিয়েছে, তখন ওঁর ওই ভূমিকা প্রশংসনীয়।