পানিহাটিতে ১৪ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ, জলের জোগান কমে অর্ধেক
বর্তমান | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: তীব্র গরমে পানিহাটি শহর জুড়ে পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়েছে। তিন বেলা জল তো দূরের কথা, দু’বেলাও বহু জায়গায় সঠিকভাবে জল আসছে না। ফলে ক্ষোভের পারদ ক্রমশ চড়ছে।
কেন এই অবস্থা? পুরসভার দাবি, ১৪ বছর আগের জনসংখ্যা অনুযায়ী জলের যে চাহিদা ছিল, তার তুলনায় বর্তমানে দিনে প্রায় সাত মিলিয়ন গ্যালন (এমজিডি) জল কম পাওয়া যাচ্ছে। অথচ, লোকসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই অবস্থায় নতুন জলপ্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের জল আসতে আরও দু’বছর সময় লাগবে। তার আগে নতুন করে ৩১টি গভীর নলকূপ তৈরি করা হচ্ছে। এই নলকূপ তৈরি হয়ে গেলে মাস দু’য়েকের মধ্যে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর গরম বাড়লে পানিহাটিতে জল সঙ্কট ভয়ঙ্কর আকার নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডেই এই সমস্যা প্রবল। তবে সব থেকে বেশি সমস্যা ২৪, ২৭, ২৮ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। পুরসভা দিনে তিনবার জল দেয়। অভিযোগ, বহু জায়গায় তিন বেলা জল আসে না। কোথাও কল দিয়ে জল পড়ে সরু সুতোর মতো। আবার কখনও এক ঘণ্টার বদলে আধ ঘণ্টা জল দিয়েই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে তীব্র সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে শহরবাসীর সিংহভাগই চাহিদা মেটান জল কিনে। গাঁটের কড়ি খসিয়ে কেনা ওই জল কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কবে এই সমস্যা মিটবে, পুরসভার তথ্যে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না শহকবাসী।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, পানিহাটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ১১ হাজার। ওই সময় শহরে জলের চাহিদা ছিল ১৯.৫ এমজিডি। তারমধ্যে ১৩.৫ এমজিডি আসার কথা কেএমডিএ’র জলপ্রকল্প থেকে। বাকি ৬ এমজিডি জল আসার কথা কামারহাটির জলপ্রকল্প থেকে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে কামারহাটি জলপ্রকল্প থেকে জল আসছে না। এদিকে, কেএমডিএ’র প্রকল্প থেকে ১৯.৫ এমজিডি জল আসার কথা থাকলেও এখন জোগান মাত্র ৯ থেকে ১১ এমজিডি। পুরসভার নিজস্ব পাম্পগুলি বহু পুরনো। তার সিংহভাগই বন্ধের মুখে। বর্তমানে পানিহাটিতে প্রায় ১ লক্ষ ৭ হাজার বাড়ি রয়েছে। প্রতি বাড়িতে পাঁচজন সদস্য থাকলে জনসংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ লক্ষের বেশি। এছাড়াও রয়েছে কয়েক হাজার বাড়ি ও ফ্ল্যাট, যেগুলি মিউটেশন করানো হয়নি।
পুর চেয়ারম্যান সোমনাথ দে বলেন, আমরা সমাধানের রাস্তা খুঁজছি। কামারহাটি থেকে জল পাওয়া যাচ্ছে না। কেএমডিএ’র পুরনো প্রজেক্ট থেকেও কম জল আসছে। ঠাকুর কর্নারে নতুন জলপ্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হচ্ছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ওই প্রকল্প চালু হলে আমরা নতুন করে ১০ এমজিডি জল পাব। এই মাঝের সময়ের সমস্যা মেটাতে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নতুন করে ৩১টি গভীর নলকূপ তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তা চালু হবে। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।