নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: হাওড়ায় হুগলি নদীর পাড় ঘেঁষে বেড়ে উঠছে লবণাম্বু গাছ। গড়ে উঠছে ম্যানগ্রোভের আদর্শ বাস্তুতন্ত্র। নদীর জলে ব্যাপক মাত্রার দূষণ রোধ করার পাশাপাশি ভাঙন আটকাতেও এই ম্যানগ্রোভ কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ হুগলি নদীর ধারে ম্যানগ্রোভ বসিয়ে সম্প্রতি বড় সাফল্য পেয়েছে। হাওড়ার আরও একাধিক এলাকায় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লবণাম্বু উদ্ভিদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাই উদ্যোগী হয়েছে বি গার্ডেন।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। ফলে কলকাতা, হাওড়া ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে হুগলি নদীতেও লবণের মাত্রা বাড়ছে বলে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে। হাওড়ার জলে লবনাম্বু উদ্ভিদ বেড়ে উঠতে পারে কি না, তা জানতে মাস কয়েক আগে পরীক্ষামূলকভাবে ম্যানগ্রোভের চারা বসানো শুরু করে বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। কম লবণাক্ত জলে জন্মাতে পারে, এমন সাতটি প্রজাতির প্রচুর ম্যানগ্রোভের চারা নিয়ে আসা হয়। বি গার্ডেন লাগোয়া হুগলি নদীর ধারে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় রোপন করা হয় সেই চারাগুলি। তাতেই মিলেছে সাফল্য। গঙ্গার মাটিতে শ্বাসমূলের জাল বিছিয়ে ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে ম্যানগ্রোভ। এতে আশাবাদী বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। বোটানিক্যাল গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দ্র সিং বলেন, হুগলি নদীর দূষণ রোধে বড় ভূমিকা নেবে ম্যানগ্রোভ। নদীর পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই গাছগুলো বেড়ে উঠছে। আরও এক কিলোমিটার অংশে ম্যানগ্রোভের চারা বসানো হবে।
হাওড়ায় গঙ্গার পাড়ে এই ম্যানগ্রোভের বেড়ে ওঠা নিয়ে বড় আশা দেখছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও। রোজ হাওড়া শহরের প্রচুর পরিমাণে দূষিত বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয় নদীতে। আগের তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টের ঘনত্ব কমে এলেও এখনও গঙ্গার দুই পাড়ে ছোট ছোট প্রচুর কারখানা রয়েছে। সেখান থেকেও প্রতিনিয়ত ভারী ধাতব মৌল বা শিল্প বর্জ্য মিশছে নদীতে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কথায়, কলকাতা ও হাওড়ায় অনেক ঘাটে জলের নমুনা পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছে, বিওডি (বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) এবং সিওডি (কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড)-এর মাত্রা অত্যধিক বেশি। এক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ হাওড়ার নদীতে প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করবে। পরিবেশবিদ ডাঃ স্বাতী নন্দীচক্রবর্তী বলেন, ম্যানগ্রোভ বেড়ে উঠলে সেখানে প্রচুর শ্যাওলাও জন্মায়। কাঁকড়ার আদর্শ বাসস্থান তৈরি হয়। ম্যানগ্রোভের ‘ইকোলজিক্যাল এফেক্ট’ অনেক বেশি। ভাঙন রুখতে ম্যানগ্রোভের মতো প্রাকৃতিক ব্যারিয়ারের তুলনা নেই। প্রসঙ্গত, হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ে ভাঙনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চন্দননগর, বাউরিয়া, শ্যামপুর, গাদিয়াড়ায় ভাঙন ক্রমেই বাড়ছে। কখনও শাল-বল্লা আবার কখনও মাটির বস্তা কিংবা জিও শিট দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে সেচদপ্তর। এই ভাঙন রোধ করতেই হুগলি নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বনদপ্তরেরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। -নিজস্ব চিত্র