অনুরাগ মণ্ডল (গ্রাফিক ডিজাইনার): বরাতজোরই বলব! না হলে বৈসরণ ভ্যালি থেকে কফিনবন্দি হয়ে ফিরতাম বাড়িতে। গত জানুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ বিয়ে করেছি। বহুদিন ধরে ইচ্ছে ছিল, কাশ্মীর যাব। সহধর্মিণী দীপান্বিতা আর আত্মীয়-স্বজনদের উৎসাহে ভূস্বর্গকেই ‘ডেস্টিনেশন’ করে ফেলি। ১৯ তারিখ পৌঁছে যাই কাশ্মীরে। সে এক অন্য অনুভূতি! শ্রীনগর ও তার আশপাশে ঘোরাঘুরি সেরে পহেলগাঁওয়ের লালিপুরার হোটেলে গিয়ে উঠলাম ২১ তারিখ রাতে। পরের দিনই ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বৈসরণ ভ্যালি... প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতি দিয়েছিল দীপান্বিতা।
ভ্যালিতে যাওয়ার রাস্তাটা বেশ দুর্গম। হেঁটে যাওয়াটা বেশ কষ্টের। ঠিক করলাম ঘোড়ায় চড়ে যাব। পহেলগাঁওয়ের সার্কিট রোড স্ট্যান্ড থেকে ভাড়ায় ঘোড়া মেলে। সেখানে গিয়ে দুটো ঘোড়া ভাড়াও করে ফেলি। ব্রেকফাস্ট করেই হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। বৈসরণ পৌঁছতে প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে বেশ খিদে পেয়ে গিয়েছে। ঠিক করলাম, আগে পেটপুজো, তারপর ঘোড়ায় চড়ে ভ্যালি। লাঞ্চ সেরে ঘোড়ায় চড়ে রওনা দিলাম। তখন বাকি আর সাত-আটশো মিটার। মনটা নেচে উঠল। আর সামান্য পথ, তারপরই অপার সৌন্দর্যের বৈসারণ ভ্যালি। হঠাৎই পরপর ফায়ারিংয়ের আওয়াজ। নাগাড়ে গুলির শব্দ। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দেখি, উপর থেকে কয়েকজন স্থানীয় মানুষ হাত নেড়ে উপরে উঠতে বারণ করছেন। চিৎকার করে বলে চলেছেন—‘গোলি চল রাহা হ্যায়, সব নীচে যাইয়ে, জলদি যাইয়ে।’ হুড়োহুড়ি, ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল। কেউ দৌড়ে, আবার কেউ ঘোড়ায় চেপেই প্রাণভয়ে নীচে নামতে শুরু করল। আতঙ্ক গ্রাস করছিল। দুর্গম রাস্তা, কাদাময়। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রতিক্ষণে। বিপদ মাথার উপর। কয়েকজন পড়ে গেলেন ঘোড়া থেকে। কীভাবে যে নীচে নেমে এলাম, মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠছি। কানে বাজছে গুলির শব্দ। কী হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হোটেলে ফেরার পথে দেখলাম সেনা জওয়ান আর নিরাপত্তা কর্মীরা এদিক-ওদিক দৌড়চ্ছেন। সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে সাঁজোয়া গাড়ি। হোটেলে ঢোকা মাত্রই পুলিস এসে জানাল, কেউ বাইরে যাবেন না। বুঝেছিলাম, বড় কিছু হয়েছে। শুনলাম পরে... কাশ্মীরপ্রেমী পর্যটকদের ঝাঁঝরা করে দিয়েছে জঙ্গিরা। আর মাত্র কয়েকশো মিটার গেলে ওই গুলির মুখে পড়তাম আমরাও। গোটা রাত ছটফট করেছি। বুধবার দুপুরে পৌঁছেছি শ্রীনগর বিমানবন্দরে। সেনা পাহারায়।
প্রত্যক্ষদর্শী বালুরঘাট শহরের রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা