• ‘মাথায় করে পুজোর ভোগ কে আনবে!’ সমীরকে হারিয়ে স্তব্ধ সখেরবাজার
    বর্তমান | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সখেরবাজারের ঊষা অ্যাপার্টমেন্টের দোতলাজুড়ে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। সেখানে থাকতেন সমীর গুহ। পাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বড় পদে কাজ করলেও কোনও অহংকার ছিল না ওই কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকের। হাসিখুশি থাকেন। সবার সঙ্গে মিশতেন। তাঁর ফ্ল্যাটের ঠিক উল্টোদিকে বিজয় সঙ্ঘ ক্লাব। দুর্গা, লক্ষ্মী, কালীপুজো ইত্যাদি অনুষ্ঠান হয়। ক্লাবের পুজো মানেই সমীর দা’র উপস্থিতি মাস্ট। তাঁকে ছাড়া বিজয় সঙ্ঘ কার্যত অচলই থাকত।

    জঙ্গি হামলায় পাড়ার সবথেকে হাসিখুশি মানুষটি নিহত। এ খবর পাওয়ার পর থেকে শোকস্তব্ধ সখেরবাজার। সকাল থেকে তাঁর ফ্ল্যাটের সামনে ঩ভিড়। প্রতিবেশীরা একে একে আসছেন। একসময় এলেন ক্লাবকর্তা দীপক। বললেন, ‘এত হাসিখুশি ছিল মানুষটা। প্রতিবার দুর্গাপুজোয় নিজেই মায়ের ভোগ রান্নার দায়িত্ব নিতেন। তারপর সেই রান্না বাড়ি থেকে নিজের মাথায় চাপিয়ে এনে মায়ের পায়ে অর্পণ করতেন। এবার কে ভোগ বানাবে? কে তা মাথায় চাপিয়ে মায়ের পায়ে ঠেকাবে?’ আর একজন পাশ থেকে বললেন, ‘অত বড় কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার। কিন্তু এত বিনয়ী, না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না। আমরা ভাবতেই পারছি না সমীর নেই। গতকাল থেকে কাশ্মীরের ঘটনা খবরে দেখছি। কিন্তু আমাদের পাড়াতে যে সে ঘটনার আঁচ এসে পড়বে ভাবতে পারিনি।’

    জঙ্গিহানার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মঙ্গলবার আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে ঊষা অ্যাপার্টমেন্ট। পথচলতি মানুষ বা অন্য পাড়ার বাসিন্দারা সমীরবাবুর ফ্ল্যাটের সামনে এসে একবার চোখের দেখা দেখে যান। সমীরবাবুর শ্যালকও একসময় এসে পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় বিজয় সঙ্ঘ ক্লাবের সদস্যদের। একসময় রাস্তা ছেড়ে ক্লাবে গিয়ে বসেন সবাই। সেখানেও একটাই আলোচনা—সমীর। পার্থবাবু, স্বপনবাবুরা বলেন, ‘পুজোর সক্রিয় সদস্য ছিলেন সমীর। গতবার দুর্গাপুজোর সময় চালচিত্র নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তা নজরে পড়েছিল ওঁর। তারপর প্রতিমাশিল্পীকে ডেকে ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছিল নিজেই।’

    কথার ফাঁকে সমীরবাবু একটি ছবি প্রিন্ট করিয়ে আনলেন দুই তরুণ। বড় একটি বোর্ডে কালো কালিতে লেখা হল শোকবার্তা-‘সমীর গুহর মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকস্তব্ধ। তাঁর পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাই।’ সেই সমবেদনা নির্ভেজাল, তা বলে দিচ্ছিল শোকার্ত ক্লাব সদস্যদের ছলছলে চোখ। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নামে এক অধ্যাপক এ পাড়ার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘এই বর্বরের মতো জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ধর্ম টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত জবাব দেওয়া। কিন্তু তাতেও কি আর আমাদের সমীর ফিরবে? ও আর কোনওদিনই ফিরবে না।’
  • Link to this news (বর্তমান)