• জঙ্গির গুলিতে ঝাঁজরা স্বামী, ‘অচেনা লোকের ইশারায় সব শেষ’, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন পুরুলিয়ার মণীশের স্ত্রী
    প্রতিদিন | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। কাশ্মীর প্যারাডাইস ফাউন্ড।’ ফেসবুকে শেষ পোস্ট করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আইবি অফিসার মণীশরঞ্জন মিশ্র। সেই সময়ও তিনি জানতেন না প্রথম দর্শনে প্রেমের ভূস্বর্গে তাঁর জন্য একে ৪৭-র গুলি অপেক্ষা করে আছে। অপেক্ষা করে আছে মৃত্যু।

    তখন মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় দুপুর গড়িয়ে বিকালের শুরু। রিসর্টের বাইরে আইবি অফিসার হর্ষ রাইডিং করছিলেন। পাশেই দাঁড়িয়ে স্ত্রী জয়া মিশ্র। ঘোড়ায় চড়া স্বামীর সঙ্গে চলছিল খুনসুটি। পাশেই হেঁটে বেড়াচ্ছিল ৬ বছরের মেয়ে। তার খেয়াল রাখছিল আইবি অফিসারের ১২ বছরের ছেলে। আর সেই সময়ই জঙ্গি
    হামলা। পহেলগাঁও হাসপাতালে ভর্তি থাকা জয়া দেবী বলেন, “একটা লোক মণীশকে যেন ইশারায় কি বলল। তখনও একে ৪৭ টা আমার নজরে পড়েনি। তারপর ওই লোকটা আমাদের সরে যেতে বলে একের পর এক গুলিতে মণীশকে ঝাঁঝরা করে দিল।” আর কথা বলতে পারলেন না ৩৬ বছরের জয়া দেবী। হাসপাতালে বারবার অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন তিনি।

    নিহত মণীশরঞ্জনের বাড়ি পুরুলিয়ার ঝালদার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ওল্ড বাঘমুণ্ডি রোডে। কর্মসূত্রে তিনি থাকেন হায়দরাবাদে। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখ মণীশের স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে রওনা দেন। বেনারস, অযোধ্যা হয়ে ১৬ এপ্রিল হরিদ্বার থেকে সপরিবারে কাশ্মীরের পহেলগাঁও পৌঁছন। কয়েকদিন সেখানেই ছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার তাঁদের জম্মুর কাটরা যাওয়ার কথা। সেখানে মিলিত হতেন বাবা-মা আর দুই ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে। তারপর তাঁদের বৈষ্ণোদেবী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মা-বাবা, দুই ভাইয়ের পরিবারকে নিয়ে আর ওই মন্দির দর্শন হল না।

    মণীশের ভাই বিনীত মিশ্র বলেন, “মঙ্গলবার বিকালে ওই খারাপ খবরটা পাই। বউদি ফোন করে বলেন, মণীশকো গুলি মার দিয়া। হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছিল আমার। তারপরেই আমরা ডালটনগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরে আসি। জানি না ওখানে গেলে বাবা-মার কী হত?” এদিকে, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মণীশের বাবা-মা । সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় আধিকারিকের বাড়িতে ভিড় উপচে পড়া ভির। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো মণীশের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ান। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মণীশরঞ্জনের বাড়িতে ফোন করে ভাই বিনীতের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

    সাড়ে বারোটা নাগাদ ওই বাড়িতে যান কেন্দ্রীয় শিক্ষাদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, পুরুলিয়া সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কাশ্মীরের বদলা হবে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে।” এরপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ওই পরিবারকে ফোনে সমবেদনা জানান।

    এখন মণীশের নিথর দেহের অপেক্ষায় তার পরিবার-সহ গোটা ঝালদা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)