• হোটেলে আটকে, বাড়ি ফেরা কবে জানে না কেউ
    এই সময় | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পছন্দের জায়গা কাশ্মীর। তিনটে জায়গা ঘুরলেও পহেলগাম সেই তালিকায় থাকবেই। ছুটির মরশুমে এ রাজ্যের বহু মানুষ বেড়াতে গিয়েছিলেন সেখানে। তাঁদের কেউ আটকে পড়েছেন পহেলগামে। কেউ ঢুকতে না পেরে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। এদিকে বাড়িতে উৎকণ্ঠা বাড়ছে পরিবারের।

    মঙ্গলবার শ্রীনগর থেকে দুপুরে পহেলগামে পৌঁছে হোটেলে আটকে পড়েছেন হুগলির সুজয় মুখোপাধ্যায়, জয়ন্ত সমাদ্দাররা। ১৬ এপ্রিল বন্ধুরা মিলে কাশ্মীরে যান। ২৮ তারিখ ফেরার কথা। অকুস্থল থেকে কিছুটা দূরেই তাঁদের হোটেল। তবে পরিস্থিতি এখন থমথমে। পহেলগামের হোটেলগুলিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের হোটেল থেকে বেরোতে দিচ্ছেন না সেনাবাহিনী। রাস্তায় শুধু ভারী বুটের শব্দ। হোটেল থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না সুজয়, জয়ন্তদেরও। চিন্তা, বাড়ি ফিরবেন কী ভাবে? হোটেলের জানলা থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে কিছুটা পরিস্থিতি আন্দাজ করার চেষ্টা করছেন। হোটেলের কর্মীদের জিজ্ঞাসা করলেও তাঁরা কোনও উত্তর দিতে পারছেন না।

    ফোনে জয়ন্ত জানিয়েছেন, বুধবার পহেলগামের রাস্তাঘাট ছিল থমথমে। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। কোনও যানবাহন চলছে না। রাস্তায় টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। মঙ্গলবার বৈসরন ভ্যালিতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদেরও। তার আগেই জঙ্গি হামলা! জয়ন্তর কথায়, ‘আজকে ভেবেছিলাম নেমে যাব। কিন্তু নামতেও দেওয়া হচ্ছে না।’ উৎকণ্ঠায় রয়েছে পরিবার। তাঁর স্ত্রী চম্পা সমাদ্দার বলেন, ‘সকালে ফোনে কথা হয়েছে।’

    মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে গাড়ি নিয়ে সবে পহেলগাম ঢুকছিলেন রকি লিন্ডারা। আচমকাই চোখে পড়ে, কাদামাখা রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন কয়েকজন। যেন ভয়ঙ্কর কোনও কাণ্ড ঘটেছে। কী হয়েছে? জানতে পারলেন জঙ্গি হামলা। ব্যস, ওখান থেকেই ফেরার পথ ধরেন। আর পহেলগাম–মুখো হননি। কাশ্মীর থেকে একটি ভিডিয়ো বার্তায় জানালেন কোলাঘাটের রকি। এই মুহূর্তে কোলাঘাটের প্রায় ৯৮ জন রয়েছেন কাশ্মীরে। ৫২ জন মঙ্গলবার পহেলগামেই ছিলেন।

    তাঁদেরই একজন অসীম দাস বলেন, ‘জঙ্গি হামলার পরে পুরোটাই ঘেঁটে গিয়েছে। অনেকেরই আজকালের মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন কী ভাবে ফিরবেন, পুরোটাই অনিশ্চিত।’ কোলাঘাটের যোগেন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দেবলীনা রাজ পণ্ডিত বুধবার একটি অডিয়ো বার্তায় বলেন, ‘পহেলগাম থেকে কোনওরকমে শ্রীনগরে পৌঁছেছি। কাল ফ্লাইট ছিল। দাদাকে দিয়ে আজ রাতের টিকিট কাটিয়েছি। পহেলগামের অবস্থা ভালো নয়। তবে শ্রীনগর শান্ত। বাড়ি পৌঁছতে পারলে বাঁচি।’

    ভূস্বর্গ দেখে চোখ সার্থক করতে গিয়ে যে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হবে, তা ভাবতেই পারছেন না হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা গোপাল ঘোষাল। গত ১৫ এপ্রিল ৫৫ জনের সঙ্গে সপরিবারে কাশ্মীর গিয়েছিলেন গোপাল। মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাম পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু, রাস্তাতেই বিকেল নামে। ততক্ষণে সেখানে ঘটে গিয়েছে নারকীয় হত্যালীলা। তাই পহেলগামে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। ৫০০ মিটার দূর থেকে ফিরতে হয়েছে। গোপাল জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের রাত অনন্তনাগের একটি হোটেলে কাটিয়ে বুধবার সকালেই কাটরায় রওনা দেন। তিনি বলেন, ‘ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছি। দুপুরে পহেলগামে পৌঁছলে বিকেলে আমরাও তো অকুস্থলে থাকতে পারতাম।’

    বুধবার অনন্তনাগ থেকে কাটরার পথে প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় সেনাবাহিনীর কড়া নজরদারি। গাড়িচালক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি কোথাও দাঁড় করানো যাবে না। গোপাল জানিয়েছেন, পরিকল্পনা ছিল, দু’দিন পহেলগাম থাকবেন। তা হলো না।

  • Link to this news (এই সময়)