তিয়াসা মৈত্র
প্রকৃতির বাধা তো ছিলই। সঙ্গে গাইডের সঠিক সিদ্ধান্ত। এই দু'টি কারণে পহেলগাম-থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছি। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে ক্ষুদিরাম পল্লিতে আমার বাড়ি। কোভিড কালের পরে নদিয়ার মোহনপুরে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসি। ১২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০ জন পড়ুয়াকে বাৎসরিক ভ্রমণে কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দলে আমিও ছিলাম।
বৈষ্ণোদেবী মন্দির দর্শনের জন্য দু'দিন কাটরায় একটি হোটেলে ছিলাম আমরা। তার পরে শ্রীনগর, সোনমার্গ, গুলমার্গ ভ্রমণ করে ১৯ তারিখে পহেলগামে পৌঁছয়। পরের দিন আমাদের পহেলগাম ছেড়ে জম্মুতে ফেরার কথা ছিল কিন্তু হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টির কারণে পার্শ্ববর্তী রামবানে ধস নামলে আমরা আটকে পড়ি। ঠিক হয়, ২২ তারিখ (জঙ্গি হানার দিন) দুপুরে বেরোব। আমাদের সঙ্গে থাকা গাইড সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। সোমবার দুপুরেই ঘুরপথে, প্রায় ১৪ ঘণ্টার রাস্তা পার করে মধ্যরাতে আমাদের জম্মুতে পৌঁছে দেন।
ধস বিপর্যস্ত রাস্তা অর্থাৎ জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক দিয়ে এলে ৬ ঘণ্টায় পৌঁছে যেতাম। এতটা ঘুরে আনার জন্য রাগ করেছিলাম গাইডের উপরে। মঙ্গলবার সন্ধেয় হোটেলের টিভিতে পহেলগামের হামলা দেখে আঁতকে উঠি। হঠাৎ করে ট্যুর গাইডের পরামর্শে আমাদের পরিকল্পনার বদল না হলে বিপদ ঘটত।
আমার বাবা বাবুলাল ছোট থেকেই আমাকে ভ্রমণে উৎসাহ দিয়েছেন। কলেজের ট্যুরের কথা শুনে আমি ও বাবা খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সময়ে ভাবিনি বেড়াতে গিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে। আমি সুস্থ আছি, এটা জানাতে বাবাকে ফোন করে কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। সাধারণত প্রিপেড সিমে কাশ্মীরে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। একমাত্র উপায় হোটেলের ওয়াইফাই। হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগ করতে পারছি না, সে কী অবস্থা। মঙ্গলবার সন্ধেয় আমাদের জম্মু থেকে দিল্লিগামী বাসে চাপিয়ে দেওয়া হয়। বাসে চেপেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছিল না!