শুধু বিতানের স্ত্রী নন, মা-বাবাও যেন পান আর্থিক সাহায্য! আর্জি কুণাল ঘোষের
প্রতিদিন | ২৪ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে বিতান অধিকারীর। ইতিমধ্যে তাঁর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার। সাহায্য়ের হাত বাড়াতে পারে কেন্দ্র ও রাজ্য। সেই অর্থের কিছুটা যেন বিতানের বাবা-মা পান, পুরোটাই যেন তাঁর স্ত্রীকে না দেওয়া হয়, এমনই আর্জি জানালেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ওঁদের পরিবারের যা সমীকরণ তাতে মৃতের বাবা-মা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। বিতান-পত্নী সোহিনী কলকাতায় ফেরার পর থেকে যা যা ঘটেছে তার নিরিখে তৃণমূল নেতার এই আবেদন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
স্ত্রীকে নিয়ে কাশ্মীর পহেলগাঁওয়ের বৈসারন ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়েছেন কলকাতার বৈষ্ণবঘাটার বিতান অধিকারী। রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় বুধবার রাতে কফিনবন্দি হয়ে তাঁর মরদেহ পৌঁছেছে কলকাতায়। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সোহিনী এবং তিন বছরের ছেলে। তাঁরা কলকাতা বিমানবন্দরেই নামতেই নাটকের সূত্রপাত। মৃতদের পরিবারকে যে কোনওরকম সাহায্য করতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যরা। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। রাজ্য় সরকার সমস্ত রকম সাহায্য করার পরও সোহিনীকে বলেতে শোনা গিয়েছে, তিনি নাকি শুভেন্দু অধিকারীর ভরসায় ফিরেছেন। তারপরই পহেলগাঁওয়ে কীভাবে হিন্দুদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে সে কথাও শোনান। সেই সময় বিতান-সোহিনীর তিন বছরের ছেলেকে কার্যত কেড়ে নিজের কোলে নিতেও দেখা যায় শুভেন্দুকে! স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাপ্রবাহ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে এদিন তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট করলেন কুণাল ঘোষ। ফেসবুকে লেখেন, ‘প্রথমে টিভিতে বাইট: হিন্দু মুসলমান বেছে মারেনি। পরে বিজেপি নেতাদের সামনে: হিন্দু বলে মেরেছে। মুখ্যমন্ত্রীসহ রাজ্যের প্রশাসনের অন্তত কুড়িটি ফোন। ফেরার সব সাহায্য। ফিরে বিজেপির সামনে: আপনাদের ভরসায় ফিরেছি। এখন শোকের বাতাবরণ। তাই অপ্রিয় প্রশ্ন তুলছি না। বাড়াবাড়ি রাজনৈতিক দ্বিচারিতার নাটক, শেখানো সংলাপে বিষ ছড়ানো দেখলে বলবই। যিনি যা মনে করেন, করবেন।’ একই সঙ্গে মৃতের বাবা-মাকেও আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন কুণাল। লেখেন, ‘মৃতের বাবা মা অসহায়। ছেলে নেই। পুত্রবধূ তাঁদের কাছে থাকতেন না, দেখতেন বলে খবর নেই। কলকাতাতেই অন্যত্র থাকতেন। বাবা মা অনিশ্চয়তায়। প্রয়াত বিতান অধিকারীর পরিবারের জন্য দুই সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন, তা যেন শুধু পুরোটা স্ত্রীকে দেওয়া না হয়। বিতানের বৃদ্ধ বাবা মায়েরও সাহায্য দরকার। ওঁদের পরিবারের যা সমীকরণ, তাতে এই দুজন ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।’
উল্লেখ্য, স্বামীর মৃত্যুতে আর্থিক সাহায্য় পাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি চৌকাঠ না পেরনোর অভিযোগ নতুন নয়। উত্তপ্ত পাহাড় কেড়ে নিয়েছিল স্বামী অমিতাভ মালিকের প্রাণ। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শহিদ সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভর স্ত্রী বিউটি মালিক। সেই ছবি ভাইরাল হয়েছিল সেই সময়। স্বামীর চাকরি পেয়েছিলেন বিউটি। তারপর বউমা আর বাড়ি আসেন না। সরকার থেকে প্রাপ্ত অর্থও পরিবারকে দেননি। এমনই আক্ষেপ শোনা গিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের গলায়। আবার কিছু দিন আগে ভারতীয় সেনায় কর্মরত ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংহের মরণোত্তর সম্মান ‘কীর্তি চক্র’ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
২০২৩ সালের ১৯ জুলাই সিয়াচেনে সেনাশিবিরের গোলাবারুদ রাখার ঘরে আগুন ধরে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল অংশুমানের। মৃত্যুর আগে চার থেকে পাঁচ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি। সেই কীর্তিকে সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি অংশুমানের মা ও স্ত্রীয়ের হাতে ‘কীর্তি চক্র’ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাপ্টেনের বাবা-মা দাবি করেছিলেন, ‘কীর্তি চক্র’ নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন তাঁদের পুত্রবধূ। সেনার ‘নেক্সট অফ কিন’ নীতি বদলের দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা। এরপরই ক্ষতিপূরণের নীতি বদল করে মধ্যপ্রদেশ সরকার। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ঘোষণা করেন, মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণের অর্থ স্ত্রী এবং ওই পুলিশকর্মীর বাবা-মায়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। এবার কাশ্মীরে নিহত বিতান অধিকারীর আর্থিক সাহায্য নিয়েও সেই ধরনের বিতর্ক তৈরি হল মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।