নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: পহেলগাঁওয়ে প্রকৃতি যেন রূপের ডালি উজাড় করে দিয়েছে। এখানেই রয়েছে একখণ্ড সুইজারল্যান্ড। হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে উঠে আসতে হয় এই ভূস্বর্গে। পহেলগাঁওয়ে গিয়েছেন অথচ মিনি সুইৎজারল্যান্ডে ওঠেননি, এমন পর্যটক খুব কম রয়েছেন। হাড়হিম করা ঘটনার আগের দিনই সেখান থেকে ঘুরে এসেছেন বর্ধমানের ২৭জন পর্যটকের দল। তাঁরাই বলছেন, শ্রীনগর নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ছিল। কিন্তু একখণ্ড সুইজারল্যান্ডে সেই নিরাপত্তা ছিল না। সেকারণেই জঙ্গিরা খুব সহজেই হত্যালীলা চালিয়ে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছে। পহেলগাঁওয়ের ওই উঁচু উপত্যকায় বহু পর্যটক ছিলেন। সেখানে বাহিনী থাকা দরকার ছিল। নিরাপত্তার বেষ্টনি সেখানেই থাকে না। সেকারণেই তারা ওই এলাকাকে টার্গেট করে।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বাসিন্দা নার্গিস খাতুন বলেন, আমরা কাশ্মীরের যেখানে ঘুরেছি সেখানেই নিরাপত্তা বাহিনী দেখেছি। বিভিন্ন জায়গায় তারা গাড়ি দাঁড় করিয়ে চেকিং করে। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের ওই উঁচু উপত্যকায় নিরাপত্তারক্ষীদের দেখা যায়নি। দুর্গম পথ পেরিয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। কষ্ট হলেও পর্যটকরা মিনি সুইজারল্যান্ডে যান। সেখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করার হাতছানি কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। এখন পর্যটনের মরশুম চলছে। পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকা সত্ত্বেও উঁচু ওই উপত্যকায় কেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল না, তা বোঝা যাচ্ছে না। আর এক পর্যটক আপেল শেখ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কাশ্মীর থেকে বাড়ি ফিরেছি। কাশ্মীরে যাওয়ার সময় ভূস্বর্গের চোখধাঁধানো ছবি দেখেছিলাম। ফেরার সময় সেই জায়গাগুলিতে ছিল আতঙ্কের ছায়া। কাশ্মীরজুড়ে নিরাপত্তার বেষ্টনি চোখে পড়েছিল। কিন্তু পেহেলগাঁওয়ে সেই ছবি ছিল না। সেখানে বাহিনী থাকলে জঙ্গিরা এভাবে তাণ্ডব চালানোর সাহস দেখত না।
বর্ধমানের একটি ট্যুর এজেন্সির কর্ণধার সুজন নন্দী বলেন, কিছুদিন আগে ওই এলাকা থেকে ঘুরে এসেছি। জঙ্গিরা পরিকল্পনা করেই ওই এলাকা টার্গেট করেছিল। কারণ উঁচু ওই উপত্যকায় বাহিনী গাড়ি নিয়ে যেতে পারে না। হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়েই এই পথ অতিক্রম করতে হয়। সেকারণে উঁচু ওই জায়গায় বাহিনী সেভাবে থাকে না। সেখানে চারদিকে জঙ্গল রয়েছে। জঙ্গিরা সেই জঙ্গলের পথ ধরেই ঢুকে হামলা চালিয়ে চলে যায়। তবে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার ছিল। পহেলগাঁও থেকে ফিরে আসা পর্যটকরা বলছেন, হামলার পর পুরো কাশ্মীরের ছবিটাই বদলে গিয়েছিল। শ্রীনগর বিমানবন্দরে পর্যটকরা ভিড় করেন। নিরাপদ জায়গা হিসেবে এই এলাকাকে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন। সেখানে বাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। হোটেলে থেকেও পর্যটকরা নিজেদেরকে নিরাপদ বলে মনে করছিলেন না। কিন্তু শ্রীনগর বিমানবন্দর ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর দখলে। সেই ছবি পহেলগাঁওয়ের সুইজারল্যান্ডে দেখা গেলে এতজনকে প্রাণ দিতে হতো না বলে তাঁদের দাবি। এখনও আতঙ্ক কাটেনি বর্ধমানের পর্যটকদের।-নিজস্ব চিত্র