• লাগোয়া বাড়ি শাসকদলের ৪ বিধায়ক ও সাংসদের, টেরই পেলেন না তাণ্ডবের!
    বর্তমান | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • অভিষেক পাল, সামশেরগঞ্জ: সামশেরগঞ্জ ইস্যুতে দলের জনপ্রতিনিধিদের জনসংযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসকদলের বিধায়ক, সাংসদ মায় নেতা, কর্মীদের বাড়ির পাশে এতবড় অশান্তির ঘটনা ঘটে গেল, তাণ্ডব চলল—কেউ কিছুই  জানতে পারলেন না! ঘটনার পর সামশেরগঞ্জের সাধারণ মানুষের মনে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল। এবার তাঁদের মনের কথাটাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুলে বিধায়ক, সাংসদদের সতর্ক করে দিলেন মমতা। 

    ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে গত ১১ এপ্রিল সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ানে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। তারপর অশান্তি ছড়ায় অন্য সব এলাকায়। জাতীয় সড়কের সামনের ডাকবাংলো মোড় থেকে ধুলিয়ান ঘাট পর্যন্ত তৃণমূলের চার বিধায়ক ও সাংসদের বাড়ি। হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষের যে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার দায় কিছুতেই এড়াতে পারেন না তাঁরা। এমনটাই অভিযোগ উঠছে সামশেরগঞ্জের আনাচে-কানাচে। 

    গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের ফলাফল ছিল নজরকাড়া। একসময় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় কংগ্রেসের দাপট থাকলেও তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি ক্ষয় হয়েছে। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন বা পুরসভা নির্বাচন, সবেতেই তৃণমূলের দাপট দেখা গিয়েছে। মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের জেরেই তা সম্ভব হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। আর সেই জনসংযোগ-সংস্কৃতির অন্যতম কারিগর তৃণমূলনেত্রী। তাঁর মতো তুখোড় জনসংযোগকারী নেতা-নেত্রী বাংলায় কার্যত নেই বললেই চলে। স্বাভাবিকভাবেই সামশেরগঞ্জের ঘটনাকে সামনে রেখে দলের বিধায়ক, সাংসদের জনভিত্তি নিয়ে আক্ষেপের সুর তাঁর গলায়। 

    রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের লাগাতার ভালো ফল হওয়ায় নেতাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। নিজের এলাকাকে হাতের তালুর মতো চিনে রাখার গরজ হারাচ্ছেন। কোথায়, কী হচ্ছে তার খবর রাখছেন না কেউই। নেতাদের নিজস্ব পলিটিক্যাল ইন্টেলিজেন্স ইনপুট না আসায় মালদা, মুর্শিদাবাদে এই ধরণের অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। পরে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ, শাসকদলের নেতা, জনপ্রতিনিধিরা টেরই পাচ্ছেন না। তাঁরা জনসংযোগের মধ্যে থাকলে এই ধরণের ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছেন অনেকেই। ঘরোয়া আলোচনায় জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার এক তৃণমূল নেতা বলছিলেন, এতবড় তাণ্ডবের খবর কেন দলের নেতাদের কাছে আগে থেকে ছিল না, তা খতিয়ে দেখতে অন্তর্তদন্ত করা হচ্ছে। 

    সামশেরগঞ্জে প্রতিবাদের নামে যেভাবে তাণ্ডব চলেছে, তাতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধুলিয়ান শহর। এখানকার রতনপুরে একের পর এক দোকানে অবাধে লুঠপাট চালানো হয়। অথচ, এই ধুলিয়ানেই শাসকদলের একাধিক বিধায়ক এবং সাংসদের বাড়ি। ধুলিয়ানের রতনপুরের বাসিন্দা জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান, ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলাম এবং সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। কাছেই থাকেন সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামও। তাঁর বিধানসভা এলাকাতেই সব থেকে বেশি গণ্ডগোল হয়েছে। ঘটনার পরে বেশ কিছু এলাকায় গিয়েও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। নিজের সাংসদ এলাকা না হলেও খলিলুর রহমান গণ্ডগোল ঠেকাতে প্রথম দিন থেকে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে দেখা যায় দলের তিন বিধায়ককে। সকলে মিলে নিজেদের উদ্যোগে আর্থিক সাহায্য করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের। কিন্তু, জনসংযোগের এই সক্রিয়তা কেন আগে দেখা যায়নি? প্রশ্ন সামশেরগঞ্জবাসীরা। খলিলুর সাহেব বলেন, ‘একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে আমাদের থেমে থাকলে হবে না। ফের সম্প্রীতি রক্ষা করতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যাতে আগামীদিনে এমন ঘটনা আর না ঘটে।   আমরা সকলেই মানুষের পাশে রয়েছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)