ওয়াকফ আইন বিরোধী সভায় গীতার শ্লোক, আসানসোলে সম্প্রীতির ধ্বজা
বর্তমান | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ফের সম্প্রীতির ধ্বজা উড়ল আসানসোল শহরে। বৃহস্পতিবার আসানসোল বাস স্ট্যান্ডে সংখ্যালঘুদের একটি সংগঠনের ডাকে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় সমাবেশ ছিল। ধর্মীয় এই সমাবেশ ঘিরে শহরে ছিল টানটান উত্তেজনা। ব্যাপক পুলিস মোতায়েন করা হয়। সেই সভাই সম্প্রীতির সভার রূপ নিল। ভারতীয় পতাকায় মোড়া সভার শুরুতে পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নীরবতা পালন হয়। সভা যত এগিয়েছে জঙ্গিদের এই হত্যালীলাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে সংখ্যালঘু ধর্মগুরুদের। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা আমাদের লড়াই হিন্দু, শিখ, ইশাইদের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের প্রতিবাদ কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে বার বার গীতার শ্লোক শোনা গিয়েছে মঞ্চের মাইক থেকে। গীতার বাণী শুনে হাততালি দিতে দেখা গিয়েছে সভায় উপস্থিত জনতাকেও। তেমনি কেউ হিন্দুস্থানকে ব্যাখা করেছেন ফুলের তোড়ার সঙ্গে। যেখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ইশাই এক একটি ফুল। কারও আবার মুখে ছিল রাম রাজত্বের কথা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, ডেপুটি পুলিস কমিশনার ধ্রুব দাস। তিনি বলেন, সভা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। পথচারীদের সমস্যা এড়াতে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। মুর্শিদাবাদের ঘটনা, তারপর কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা— দেই আবহেই সংখ্যালঘুদের ওয়াকফ বিরোধী সভার ডাকে রক্তচাপ বেড়েছিল পুলিস ও প্রশাসনের। তাঁরা ভালো মতোই জানে এই সময়ে পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। তাই বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিস আনা হয়েছিল নিরাপত্তার খাতিরে। নির্ধারিত সময়ে সভা শুরু হয়। এই আইন প্রণয়ন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হলেও কোনও ধর্মীয় উস্কানি ছিল না। সভার অন্যতম আয়োজক মুফতি সৈয়দ কাশমি বলেন, আপনারা যদি আমাদের বেকার যুবকদের কাজের জন্য কোনও আইন আনতেন, তাঁদের শিক্ষার জন্য কোনও আইন আনতেন আমরা তা স্বাগত জানাতাম। সে সব নিয়ে কেন চর্চা নেই। সভার সঞ্চালক ছিলেন মৌলানা তাবরক হোসেন। উনি বার বার গীতার শ্লোক সংস্কৃতে উচ্চারণ করে হিন্দিতে তাঁর অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। পরে তিনি ‘বর্তমান’-কে বলেন, আমি চতুর্বেদী। চারটি বেদই পড়েছি। গীতা ও কোরান কোথাও পহেলগাঁও হত্যালীলার অনুমতি দেয় না। যারা করেছে তার অন্যায়কারী। আমি গীতার ১৬তম অধ্যায়ের ১ নম্বর শ্লোক উল্লেখ করে বলেছি, কী ভাবে আমাদের ধর্মের পথে থেকে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এদিন সভার মুখ্য বক্তা ছিলেন পাটনার মৌলানা আহমেদ হোসেন। তিনি বলেন, এই দেশের ইতিহাস অমিত শাহ কী জানবে। ইংরেজদের কাছে মাথা নত না করার সাক্ষী আজও বহণ করে চলেছে জামা মসজিদ। যেখানে ইংরেজের গোলামি না মেনে মৃত্যু বরণ করেছিল ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এই দেশ রাম, লক্ষ্মণের দেশ। এখানে সব মানুষ এক হয়ে থেকেছে।
এদিন সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন আসানসোল আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী শেখর কুণ্ডু। তিনি বলেন, ওয়াকফ আইন বদলের আগে যথেষ্ট আলোচনা প্রয়োজন ছিল। তা করা হয়নি।