নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: রাত আড়াইটে। লিভ ইন পার্টনারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল প্রেমিকার। অভিমান করেই ফ্ল্যাট থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন প্রেমিকা। রাস্তায় তাঁকে একা পেয়ে তিনজন যুবক শুরু করেছিল কটূক্তি। এমনকী তরুণীর হাত ধরে তারা টানাটানিও করে। প্রেমিকার ফোন পেয়ে দৌড়ে বাইরে আসেন লিভ ইন পার্টনার। ঘটনার প্রতিবাদ করেন তিনি। তার জেরেই প্রথমে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় তরুণীর লিভ ইন পার্টনারকে। মাটিতে পড়ে গেলে ইট দিয়ে থেঁতলানো হয় মাথা। সহযোগিতা চাইলেও আশপাশের লোকজন কেউ বেরিয়ে আসেননি। পরে পুলিসের হস্তক্ষেপে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, শেষ রক্ষা হয়নি। এন আর এস হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় যুবকের। এই হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগরের ক্ষুদিরামপল্লি এলাকায়। মূল অভিযুক্ত সহ তিনজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ধৃতদের নাম শম্ভু মণ্ডল, রাজু ঘোষ ও সাগর দাস। শম্ভুই মূল অভিযুক্ত। গ্রেপ্তার পর তাদের নিউটাউন থানায় নিয়ে যাওয়া হলে উত্তেজিত জনতার হাতে অভিযুক্তদের পরিবারের দু’জন আক্রান্তও হয়।
পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সঙ্কেত চট্টোপাধ্যায় (২৯)। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সঙ্কেতের বাড়ি বাগুইআটির জ্যাংড়ায়। গত দেড়বছর ধরে নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগরে একটি ফ্ল্যাটে প্রেমিকার সঙ্গে লিভ ইনে ছিলেন। সঙ্কেতের বোন মহিমা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘হবু বউদিকে শ্লীলতাহানির সঙ্গে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। দাদা গিয়ে প্রতিবাদ করে ওদের হাত থেকে বউদিকে বাঁচাতে যান। ওরা দাদাকে আক্রমণ করে। আমরা খবর পেয়ে পৌঁছে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় দাদা পড়ে রয়েছে। বমি করছে। কিন্তু, কেউ সাহায্য করছে না। প্রায় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা ওখানে পড়েছিল। প্রথমে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে এনআরএস। আমরা খুনিদের কঠোর শাস্তি চাই’। সঙ্কেতের বাবা কানাইবাবু বলেন, ‘এনআরএসে ছেলেকে ট্রলিতেই দীর্ঘক্ষণ ফেলে রেখেছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ সেখানেই মারা যায়। ক্ষুদিরামপল্লির স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, শম্ভু এলাকার নানা অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। যদিও ধৃত শম্ভু’র স্ত্রী বর্ষা মণ্ডল বলেন, ‘রাতে কী হয়েছে জানি না। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই এক নাবালিকা বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে এই গৌরাঙ্গনগর থেকেই অপহৃত হয়েছিল। নিউটাউনে তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল এক টোটোচালক। ফের গৌরাঙ্গনগরের এই ঘটনায় শোরগোল ছড়িয়েছে।