এই সময়: বঙ্গ–বিজেপিতে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন মানেই সাংগঠনিক কমিটিগুলিতেও আমূল বদল। বহু বছরের সেই রীতির পরিবর্তন ঘটাতে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যাতে ‘নতুন নেতারা’ চেয়ারে বসে অভিজ্ঞদের পুরোপুরি ছেঁটে না ফেলতে পারেন।
সূত্রের খবর, এই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল।
২০১৫–তে রাজ্য সভাপতির চেয়ারে বসেই নিজের মতো করে টিম সাজিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। তখন বঙ্গ–বিজেপির বিভিন্ন সাংগঠনিক কমিটি এবং সেল–মোর্চাগুলি থেকে বাদ পড়েছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের বেশির ভাগ এখনও নিষ্ক্রিয়।
কার্যত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল দিলীপ–জমানার অবসানের পর। সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি হওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই বিজেপির বিভিন্ন কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলা হয় দিলীপের ‘প্রিয়পাত্র’দের। দিলীপ–জমানায় বঙ্গ–বিজেপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা।
সুকান্তর কমিটিতে তাঁরা কোনও গুরুত্ব পাননি। সায়ন্তনকে রাজ্য কমিটির সাধারণ সদস্যও করা হয়নি। এ রকম উদাহরণ পদ্ম–শিবিরে প্রচুর। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলায় বিজেপির সংগঠন মজবুত না হওয়ার পিছনে এটাও মস্ত কারণ।
২০২৬–এর বিধানসভা ভোটের আগে সেই ভুল শুধরে নিতে চাইছেন সুনীল বনসলরা। বিজেপিতে সাংগঠনিক নির্বাচন–পর্ব চলছে। অধিকাংশ জেলাতেই সভাপতির নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এর পর নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা হয়ে গেলে জেলা এবং রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা হবে। একই সঙ্গে দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলিরও কমিটি তৈরি হবে।
সূত্রের খবর, বনসল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, দলের আইটি সেলের ইনচার্জ, ট্রেজারার পরিবর্তন করতে গেলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। নিজের টিম তৈরির নামে এই সব পদে পরিবর্তন করা যাবে না। একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, মোর্চাগুলির সভাপতি কাদের করা হচ্ছে এবং কোন যোগ্যতার নিরিখে—তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাও দিল্লিতে পাঠাতে হবে।
শুধু তাই নয়, বিজেপির জেলা সভাপতিদের বনসল স্পষ্ট জানিয়েছেন, জেলা কমিটিগুলি তৈরির সময়ে মাথায় রাখতে হবে যাতে পুরোনো কমিটির অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ সদস্যকে রাখা হয়। অর্থাৎ, নতুন জেলা সভাপতি মানেই তাঁর অনুগামীরাই শুধু কমিটিগুলিতে ঠাঁই পাবেন, এমনটা আর হবে না বঙ্গ–বিজেপিতে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ পদাধিকারী বলেন, ‘আসলে বনসলজি নতুন–পুরোনোর একটা ভারসাম্য চাইছেন রাজ্য বিজেপিতে। গত তিন বছর যাঁরা নানা ঘাত–প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে পোড় খেলেন, তাঁরা যাতে বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে নিষ্ক্রিয় না হয়ে যান, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’