ফোনে কথোপকথন চলছে এক ডাক্তার ও রোগিণীর মধ্যে। রোগিণী বলছেন, ‘‘আপনি খুব খারাপ করেছেন, আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে!’’ ডাক্তার ফুঁসে উঠে বলছেন, ‘‘যারা আমার ধর্মের লোকজনকে মারে, তাদের আমি কিছুতেই দেখব না! লজ্জা করে না? আসো কেন আমার কাছে? খুন করা মানুষ!’’ ফোনের এই কল রেকর্ডিংয়ের ভিত্তিতে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) ওই মুসলিম রোগিণী জনৈক মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই রোগিণীকে সেই মহিলা চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর কোনও ‘মহমেডান পেশেন্ট’ (মুসলিম রোগী) দেখবেন না।
মহেশতলার একটি আবাসনের বাসিন্দা ওই স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের নাম চম্পাকলি সরকার। কঙ্কনা খাতুন নামে রোগিণী তাঁর প্রতিবেশী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চম্পাকলি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কাশ্মীরের ঘটনার জেরে আমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে, কোনও মুসলিম রোগীকেই দেখব না, এটা বলিনি!’’ কোনও কোনও মুসলিম রোগীর সঙ্গে সম্প্রতি তাঁর টাকা মেটানো নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে বলেও দাবি করেন চম্পাকলি। এ দিন বিকেলেই কঙ্কনা চম্পাকলিকে দেখাতে গিয়েছিলেন। রাতেই কঙ্কনার স্বামী শেখ সাইফুল্লা মহেশতলা থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছেন। চম্পাকলি এ দিন বলেন, ‘‘ওই মহমেডান মহিলাও টাকা মেটাতে গাঁইগুঁই করছিলেন।’’ চম্পাকলির স্বামী, প্রাথমিক চক্ষু পরীক্ষক শেখ সাইফুল্লা বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী কখনও রিপোর্ট দেখাতে গেলেও আমি যেচে ওই ডাক্তারকে টাকা দিই। আজও ৫০০ টাকা অনলাইনে দিয়েছি। এটা সর্বৈব মিথ্যা। এক জন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ধর্মীয় বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছি।’’
কাশ্মীরে জঙ্গি উপদ্রবে বাঙালির রক্ত ঝরছে। নিরীহ পর্যটক বা কর্তব্যরত বাঙালি জওয়ানের প্রাণ যাচ্ছে। যাঁরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম। এ দিনই সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর আসে। ঠিক তখনই কলকাতায় নিজেদের আবাসনের পাশের টাওয়ারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে এক মুসলিম রোগিণী অপমানিত হন বলে অভিযোগ। ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য ডাক্তারের কাছে হেনস্থা হওয়ার এই অভিজ্ঞতা এ দিনই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গত বছর বাংলাদেশের গোলমালের সময়েও জনৈক ডাক্তার বাংলাদেশি রোগীদের দেখবেন না জানিয়ে হুঙ্কার দেন বলে অভিযোগ ওঠে। চম্পাকলি জানান, পহেলগামে নিহতদের এক জনের পরিবারকে তিনি চেনেন। তিনি বলেন, ‘‘অত রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু নানা জায়গায় খবরটা দেখছি, আলোচনা শুনছি। নেতাদের দেখছি। এ সব মিলিয়েই উত্তেজিত হয়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার রোগীদের বেশির ভাগই মহমেডান। ওঁদের না-দেখলে আমার পেশার ক্ষতি। আমি কোনও মুসলিমের চিকিৎসা করব না বলতে চাইনি।’’
বাস্তবিক, পহেলগামের ঘটনার পরে জনৈক রাজনৈতিক নেতার মুখেও একটি সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার আস্ফালন। এ সবের জেরে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বলে নানা মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।