• পর্যটকদের উপরে হামলার নিন্দায় প্রাক্তন উগ্রপন্থীরা
    আনন্দবাজার | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলায় পর্যটকদের মৃত্যু আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়, বলছেন ওঁরা। ‘কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজ়েশন’ (কেএলও)-এর প্রাক্তন সদস্য এবং প্রাক্তন মাওবাদীরা।

    গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে চলতি শতকের প্রথম বছর তিনেক উত্তরবঙ্গে ‘রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম’ চালিয়েছিল কেএলও। উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন কেএলও সদস্যদের একটা বড় অংশের দাবি, তাঁদের ‘অপারেশনে’ নিহতেরা পর্যটক নন। তখন চাইলে, দার্জিলিং, বক্সা, জলদাপাড়া, চিলাপাতা, গরুমারার জঙ্গলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিশানা করতে পারত কেএলও। কিন্তু পর্যটনের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের জীবিকা জুড়ে থাকায় তেমন হামলা হয়নি।

    কেএলও-র প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন বর্মণ ওরফে বর্ধমান দাস বৃহস্পতিবার বলেন, “কাশ্মীরে যেমন হামলা হয়েছে, আমরা সে দিন তেমন পথে হাঁটলে, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আমাদের সমর্থন করতেন না।’’ সংগঠনের একাধিক নেতা-নেত্রী জানাচ্ছেন, পর্যটন ক্ষেত্রে বা নিরীহ পর্যটকদের উপরে আক্রমণ চালালে, সংগঠনের অন্দরে তাঁদের একঘরে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল বা জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা কেএলও-র প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার টম অধিকারী ওরফে জয়দেব রায় বলেন, “কিছু অপারেশন আমাদের সংগঠন চালিয়েছিল। কিন্তু পর্যটকদের উপরে আক্রমণের ভাবনা সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছিল না।” কেএলও প্রধান জীবন সিংহের বোন তথা সংগঠনের প্রাক্তন সদস্য সুমিত্রা দাস বর্মণ বলেন, “কাশ্মীরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সমর্থন করি না।”

    কেএলও পর্যটন ক্ষেত্রে সরাসরি হামলা না করলেও, মাওবাদীদের ক্ষেত্রে তেমন বলা যায় না। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে দু’টি বনবাংলোয় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তারা। কাঁকড়াঝোড়-ওদলচুয়ায় ঠিকাদারের গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি এলাকায় নির্মীয়মাণ অতিথিনিবাস মাওবাদীরা প্রায় গুঁড়িয়ে দেয় শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহারে।

    ঝাড়গ্রামের সরডিহায় রাজধানী এক্সপ্রেস আটকের মামলায় অভিযুক্ত এক প্রাক্তন মাওবাদী বর্তমানে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ড। তিনি বলেন, ‘‘তৎকালীন রাজ্য সরকারের দমনমূলক নীতির প্রতিবাদে সরকারি সম্পত্তি ও পর্যটন স্থলে আক্রমণ হয়েছিল। সে সময়ে বনবাংলোগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনী রাখা হত। আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল, জঙ্গলমহল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার। তাই কয়েকটি পর্যটনস্থলে হামলা চালানো হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা অথবা পর্যটকদের নিশানা করা অনুচিত, অর্থহীন এবং নিন্দনীয়।’’ হুগলির বাসিন্দা সিপিআইয়ের (মাওবাদী) প্রাক্তন এক কর্মীর সংযোজন, ‘‘পরবর্তী সময়ে পর্যটন ক্ষেত্রে হামলার ঘটনার পর্যালোচনা হয়েছে দলের অন্দরে। বৈসরনের ঘটনায় পর্যটক হত্যার পাশাপাশি, স্থানীয় মানুষের ব্যবসার উপরে আঘাতের নিন্দা করছি।’’ পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় এলাকার এক আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী বলেন, ‘‘বন্দুক নিয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু ধর্মের বাছবিছার করে নয়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)