মদের আসরে পাওনাগন্ডার হিসাব নিয়ে বচসা, তর্কাতর্কি। যার জেরে শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি থেকে খুন হলেন এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ফয়জ়ল ফাহিম (১৯)। বাড়ি জোড়াসাঁকো থানা এলাকার মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে। এই ঘটনায় মহম্মদ নায়েদ নামে এক যুবক গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনায় যুক্ত মহম্মদ রশিদ নামে আর এক যুবক অধরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিধান সরণি লাগোয়া মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে বুধবার গভীর রাতে ফয়জ়লের সঙ্গে নায়েদ ও রশিদের বচসা শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মত্ত অবস্থায় পাওনাগন্ডার হিসাব নিয়ে ওই ঝামেলার সূত্রপাত। রাত ২টো নাগাদ রশিদ ও নায়েদ ফয়জ়লের উপরে চড়াও হয়।
নিহত ফয়জ়লের মা শামিমা খাতুনের অভিযোগ, ভাঙা মদের বোতল দিয়ে তাঁর ছেলের গলায় আঘাত করা হয়। ছুরি দিয়েও কোপানো হয়। সেই রাতেই ফয়জ়লকে সঙ্কটজনক অবস্থায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দু’জায়গায় চাপ চাপ রক্তের দাগ। দু’জোড়া জুতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশ জায়গা দু’টিকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রেখেছে। মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটের ওই জায়গার এক দোকানদারের ক্ষোভ, ‘‘আমরা দোকান বন্ধ করার পরেই এলাকায় মত্তদের ভিড় বাড়ে। মদ, গাঁজা খায় যুবকেরা। পুলিশকে আগেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।’’
বুধবারের ঘটনার পরে দুশ্চিন্তা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তাই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়াতে তাঁরা জোড়াসাঁকো থানায় চিঠি দিচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজেশ জয়সওয়ালের অভিযোগ, ‘‘কাল রাতে তিন যুবকই মত্ত অবস্থায় ছিল। নেশার ঘোরে একে অন্যকে খুন করেছে। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।’’ এলাকাবাসীর ক্ষোভ, মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে রাত বাড়লে দুষ্কৃতীদের ভিড় বাড়ে। অবিলম্বে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা বাড়তে থাকবে।
নিহত ফয়জ়লের বাড়ি ঘটনাস্থলের কাছেই। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর দিদি শোকে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাড়ির লোকেরা জানান, নিয়মিত নেশা করতেন ফয়জ়ল। বুধবার রাত ৯টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন। কয়েক দিন ধরেই রাতে বেরিয়ে গভীর রাতে ফিরছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুলিশ দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিক।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তদন্ত চলছে। আর এক অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তবে দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশি নিরাপত্তার অভাব প্রসঙ্গে লালবাজারের এক আধিকারিক জানান, পুলিশ নিয়মিত সেখানে টহল দেয়। এ বার থেকে এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।