• আর সল্টলেক নয়, এসএসসি ভবনের সামনে থেকে অবস্থান তুলে অন্যত্র সরছেন চাকরিহারারা
    আনন্দবাজার | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • এসএসসির চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থান সরে আসছে ধর্মতলার কাছে। শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান করবেন তাঁরা। এত দিন সল্টলেকে এসএসসি ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল। শুক্রবার তাঁরা স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে জানানো হয়েছিল, ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে অবস্থানে বসবেন তাঁরা। পরে চাকরিহারারা জানান, শহিদ মিনারে অবস্থান চলবে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এসএসসির তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁরা স্কুলে ফিরতে শুরু করেছেন। যদিও আন্দোলন থামছে না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। স্কুলে ফিরলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

    এসএসসি ভবনের সামনে থেকে অবস্থান প্রত্যাহার করার কথা শুক্রবার ঘোষণা করেন চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতে রিভিউ পিটিশন (পুনর্বিবেচনার আবেদন) জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে স্কুলে ফেরার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা কয়েক জন শহিদ মিনারে অবস্থান চালিয়ে যাবেন। অন্য দিকে, সল্টলেকের করুণাময়ী এবং নিবেদিতা ভবনের সামনে এসএসসির গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-এর কর্মচারীরা অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।

    যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা প্রকাশের দাবিতে এসএসসি ভবনের সামনে টানা দু’দিন অবস্থানে বসেছিলেন চাকরিহারারা। এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার নিজের দফতরে বন্দি হয়ে পড়েছিলেন। পরে কমিশনের তরফে ‘অযোগ্য নয়’ এমন শিক্ষকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে জেলায় জেলায় ডিআই দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ১৮০৩ জনের নাম বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০৩ জনকে। এই তালিকায় ত্রুটি রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন চাকরিহারাদের একাংশ। আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডলের নামও এই তালিকায় ছিল না। যাঁরা নিজেদের ‘যোগ্য’ বলে দাবি করছেন, তাঁদের নাম সংগ্রহ করে এসএসসিকে জমা দেওয়ার পর কমিশন স্বীকার করে নেয়, ভুল হয়েছে। ২০১৮ সালের পর থেকে তাদের সার্ভার আপডেট করা হয়নি। অনেকের চাকরিতে যোগ দেওয়ার তথ্য তাই কমিশন পায়নি। ওই তালিকা সংশোধন করে আবার ডিআই দফতরে পাঠানো হবে। চিন্ময়, মেহবুবেরা জানান, তাঁদের কাছে নতুন তালিকার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। এসএসসি দফতরের সামনে ‘যোগ্য’দের সঙ্গে ‘অযোগ্য’দের বিবাদও শুরু হয়েছিল। অনেকে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সল্টলেক থেকে অবস্থান প্রত্যাহারের সেটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

    এ প্রসঙ্গে চিন্ময় বলেন, ‘‘যদি বলেন যোগ্য শিক্ষকেরা হাতাহাতির ভয়ে চলে যাচ্ছে, তা হলে সেটা ঠিক। আমরা চাই না, অযোগ্যদের সঙ্গে আমাদের লড়াই হোক। সেই কারণেই আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি। যোগ্যদের যে তালিকা স্কুলে গিয়েছে, সেখানে যোগ্যদের অন্তত ৩০০ জনের নাম নেই। এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে আমাদের আশঙ্কা। ওই তালিকা এসএসসি সংশোধন করবে বলে আমাদের মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে। যোগ্য শিক্ষাকর্মীদের বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিত। তাঁরা বেতন না পেলেও কিছু টাকা যাতে পান, সেটা দেখুন। কারণ সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের আবেদন গ্রাহ্যই হয়নি। এখন তাঁরা সম্পূর্ণ চাকরিহারা।’’ তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মেহবুব বলেন, ‘‘তালিকায় কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছে। যোগ্যদের তালিকা ডিআই অফিসে গেলেও, সেই কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়নি। পর্ষদের এই তালিকা প্রকাশ করা উচিত ছিল। এমন কিছু যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, কিন্তু তাঁদের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের নাম নেই ওই তালিকায়। বদলি হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামও নেই।’’

    উল্লেখ্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ নন যাঁরা, তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় তাঁদের যোগ দিতে হবে। শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কার্যকর করা হবে না। এই নির্দেশের পরেই স্কুলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার থেকে তাঁরা স্কুলে যাবেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)