• ধর্না ছেড়ে স্কুলে ফিরছেন ‘যোগ্য’রা, তবু ফেরেনি স্বস্তি
    এই সময় | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: চাকরি ফেরতের দাবিতে এতদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সল্টলেক অফিসের সামনে সোমবার থেকে ধর্না আন্দোলন চালাচ্ছিলেন তথাকথিত ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। এ বার সেই রাস্তার দখল নিলেন অন্য একদল, সুপ্রিম–রায়ে যাঁদের ‘টেন্টেড’ বা ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরাও নিজেদের ‘যোগ্য’ বলে দাবি করে বৃহস্পতিবার থেকে ধর্নায় বসে পড়লেন, যা নিয়ে এ দিন নজিরবিহীন সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় এসএসসি অফিসের সামনে।

    এ দিন সকাল থেকেই এসএসসি ভবনের সামনে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের ধর্নায় উপস্থিতির হার ছিল বেশ কম। এখনও অনেক ধর্নারত শিক্ষক সেই কারণে সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে আবেদন জানিয়েছেন, দ্রুত ধর্নাস্থলে আসতে। বিভিন্ন জেলা থেকে জানা গিয়েছে, যে সব ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকার নাম এ মাসের বেতনের জন্য স্কুলে স্কুলে পৌঁছেছে, তাঁদের অনেকেই এ দিন ক্লাসে যোগ দিয়েছেন।

    পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি এলাকার এক স্কুলে কাজে যোগ দেওয়া শিক্ষক সুমন সরকার বলেন, ‘আমদের অবস্থাটা হলো আইসিসিইউ থেকে ছাড়া পেয়ে জেনারেল বেডে ট্রান্সফার হওয়ার মতো। স্কুলে আসব। ক্লাস নেব। খাতা দেখব। তবে বাড়ি ফেরার সময়ে জানব না, আগামী কাল এই স্কুলে আবার ফিরতে পারব কি না। ৩১ ডিসেম্বরের নির্দেশিকার কথা সব সময়েই আমাদের নাড়া দিচ্ছে।’

    পুরুলিয়ার কাশীপুর জেকেএম গার্লস হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নমিতা পণ্ডিতের কথায়, ‘আমাদের তিন শিক্ষিকার মধ্যে দু’জন এ দিন এসেছেন। এত দিন কেউই আসছিলেন না। আজ এলেও তাঁরা সই করেননি, ক্লাসও নেননি।’ উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সাত জন চাকরিহারা শিক্ষিকাদের মধ্যে এ দিন পাঁচ জন স্কুলে এসেছেন। বাকি দু’জনের একজন অসুস্থ থাকায় এবং অন্যজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় স্কুলে আসেননি বলেই জানা গিয়েছে।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের চাকরিহারা আট জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ছ’জন এ দিন স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতির কথায়, ‘বাকি দু’জনও দ্রুত স্কুলে আসবেন বলে আমরা আশাবাদী। আমার স্কুলের আটজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই যোগ্য তালিকায় রাখা হয়েছে। ফলে আমরা খানিকটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছি।’ মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া হাই স্কুলেও পাঁচ জন চাকরিহারা শিক্ষকের মধ্যে পাঁচ জনই বৃহস্পতিবার স্কুলে এসেছিলেন।

    তবে এ দিনও সল্টলেকে এসএসসি ভবনের সামনে যে ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা ধর্নায় বসেছিলেন, তাঁদের অভিযোগ, ‘টেন্টেডদের জন্যই আমাদের চাকরি গিয়েছে।’ পাল্টা ‘অযোগ্য’রা বলছেন, ‘ওঁরা আমাদের অযোগ্য বলার কে? সুপ্রিম কোর্টও আমাদের অযোগ্য বলতে পারেনি।’ ঘটনা হলো, শিক্ষা দপ্তর ‘যোগ্য’দের যে তালিকা জেলায় জেলায় পাঠিয়েছে তাতে অবশ্য নাম নেই এই ‘টেন্টেড’ শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের।

    অবিলম্বে তাঁদের নামও তালিকাভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা। দু’পক্ষের মাইক বাজানো, সভা, স্লোগানে কান পাতা দায় এসএসসি ভবনের সামনে সল্টলেকের ইই ব্লকে। সন্ধ্যার পরে অবশ্য এই ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তরফে কমলেশ কাপাট বলেন, ‘আমাদের সভা চলাকালীন ওঁরা পাল্টা মাইক বাজিয়ে, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আমাদের বিরক্ত করছিলেন। ফলে কিছুটা তর্কাতর্কি হয়।

    সন্ধ্যা নাগাদ আমরা ওঁদের বলেছি ডিম-ভাত হচ্ছে। আপনারা চাইলে ডিনারে জয়েন করতে পারেন।’ ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তরফে চিন্ময় মণ্ডলের বক্তব্য, ‘অযোগ্যদের জন্যই যে আমাদের চাকরি গিয়েছে, তা সুপ্রিম–রায়ে পরিষ্কার। সেই কারণেই ওঁদের দেখে কিছু শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। ওঁরাও লাগাতার উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন। তবে ওঁদেরও গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে।’

    তবে ‘যোগ্য’দের আন্দোলন কি ক্রমশ থিতিয়ে যাচ্ছে? চিন্ময়ের কথায়, ‘সামনেই গরমের ছুটি পড়বে। স্কুলে শিক্ষকরা গিয়েছিলেন যোগ্যতার প্রমাণ দিতেই। সেই কাজ মিটিয়ে দ্রুত তাঁরা আন্দোলনেই যোগ দেবেন।’ এরমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের জন্য ওকালতনামায় স্বাক্ষর সংগ্রহও করছেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)