এই সময়: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি বাতিল হওয়ায় রাতারাতি ঘরে বসে গিয়েছিলেন যোগ্য এবং অযোগ্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা। সল্টলেকে এসএসসির দপ্তরের বাইরে চলছিল ঝাঁঝালো আন্দোলন। এ বার স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রতিটি স্কুলে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা পাঠানো শুরু করতেই তালিকা অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার স্কুলে ফিরতে শুরু করলেন। একমাত্র তালিকায় যাদের নাম নেই তাঁরাই হয় ঘরে বসে রইলেন কিংবা এসএসসি ভবনের সামনে ধর্নায় বসলেন।
ভাঙড় থেকে প্রায় ৭০ জন শিক্ষক যোগ্য–অযোগ্য তালিকায় ছিলেন। তাদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষক অযোগ্য তালিকায় চলে গেলেন। প্রতিটি স্কুলে কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য সেই লিস্ট পাঠিয়েছে কমিশন। অযোগ্যদের নাম কাটানোর জন্য এ দিন আলিপুর ডিআই অফিসে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছিল। সেখানেই অনলাইনে অযোগ্য শিক্ষকদের নাম বাদ দেওয়া হয় এবং বেতন পোর্টালে যোগ্য শিক্ষকদের নাম আগের মতোই বহাল থাকে।
একসঙ্গে ৬ জন শিক্ষক হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন ভাঙড়ের পোলেরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সরকার। তিনি বলেন, ‘৩৯০০ পড়ুয়া নিয়ে আমাদের হিমশিম অবস্থা। স্কুলে দু’জন শিক্ষক অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন এবং চারজন শিক্ষক স্কুলে ফিরেছেন।’ কচুয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘আপাতত চিন্তা মুক্ত হলাম। আমার তিনজন শিক্ষকই আবার স্কুলে আসছেন আগের মত। কিন্তু ক্লার্ক আসছেন না।’
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলে পার্শ্বশিক্ষক এবং স্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল ৫৫ জন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা হয়েছিলেন এই স্কুলের ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। একসঙ্গে এতজন শিক্ষকের চাকরি যাওয়ায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর পঠনপাঠন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের চাকরিহারা ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ৬ জনই এ দিন যোগ দিয়েছেন। অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, বাকিরাও খুব শীঘ্রই স্কুলে যোগ দেবেন।
এসএসসি থেকে শিক্ষা দপ্তর হয়ে তথাকথিত যোগ্য শিক্ষকদের বেতনের তালিকা পৌঁছেছে জেলার ডিআই অফিস। সেই তালিকা পৌঁছনোর কথা জানার পরেই বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে অশোকনগর, বাগদা, দেগঙ্গার স্কুলগুলিতে চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুলে আসেন। বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সাতজন চাকরিহারা শিক্ষিকাদের মধ্যে এ দিন পাঁচজন স্কুলে এসেছেন।
প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল বলেন, ‘ডিআই অফিস থেকে যে তালিকা এসেছে, তার প্রথম দিকেই আমার স্কুলের সাতজন শিক্ষিকার নাম রয়েছে। ওরা স্কুলে এসে ক্লাস নেওয়ার ফলে অন্যান্য শিক্ষিকাদের উপরে চাপটা কমেছে।’ দেগঙ্গা চৌরাশি হাইস্কুলের চাকরিহারা পাঁচ জন শিক্ষক এসেছেন এদিন। প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘শিক্ষাকর্মী আসেননি। তাঁর কাজটা একজন পার্টটাইম ক্লার্ক এবং একজন শিক্ষককে দিয়ে সামাল দিতে পেরেছি।’
বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ ঋতু ভগত হাইস্কুলের ৬ শিক্ষক ও একজন করণিক কাজ হারিয়েছিলেন। সব শিক্ষকই যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, জয়নগর–২ ব্লকের মনিরতট রাইমণি ইনস্টিটিউশনের ছয় শিক্ষককে চাকরি হারাতে হয়। পরে তাঁদের প্রত্যেকের নাম ডিআই অফিস থেকে পাঠানো হয়েছে স্কুলে। যদিও বৃহস্পতিবার তাঁদের একজনও কাজে যোগ দেননি।