• কাশ্মীরের জঙ্গি-হানায় আর্থিক ক্ষতির মুখে বঙ্গের ভ্রমণসঙ্গীরা
    এই সময় | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, কোলাঘাট

    পুলক বেরা, তমলুক

    জঙ্গি উপদ্রব কমে যাওয়ায় ২০১৯ সালের পর পর্যটকদের কাছে কাশ্মীর ভ্রমণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপরে কোভিড-কালে ফের হোঁচট খায় পর্যটন সংস্থা। কোভিডের পরে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হলে হালে পানি পেতে শুরু করে ভ্রমণ সংস্থাগুলো। আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছিলেন ভ্রমণসঙ্গীরাও। যাঁরা মূলত ভ্রমণের আয়োজক এবং গাইড হিসেবে কাজ করেন।

    কিন্তু কাশ্মীরে পর্যটকদের উপরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মাথায় হাত ভ্রমণসঙ্গীদের। কাশ্মীর ভ্রমণের সমস্ত আগাম বুকিং বাতিল করতে শুরু করেছেন তাঁরা। ট্যুর বাতিল হয়ে যাওয়ায় টাকা ফেরতের চাপ দিচ্ছেন পর্যটকরা। কোলাঘাট ও তমলুকে আর্থিক চাপে পড়েছেন তাঁরা।

    প্রায় তিরিশ বছর ধরে একটি ভ্রমণ সংস্থা চালাচ্ছেন কোলাঘাটের অসীম দাস। কয়েকদিন আগেই পর্যটকদের নিয়ে কাশ্মীর থেকে ফিরেছেন। মে মাসে এবং পুজোর ছুটিতে পর্যটক নিয়ে ফের কাশ্মীরে যাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত ছিল। ট্রেনের টিকিট থেকে শুরু করে কাশ্মীরে হোটেল ও গাড়ি বুকিং সেরে ফেলেন অসীম। জুলাইয়ে ১৩০ জন তীর্থযাত্রী নিয়ে অমরনাথ যাওয়ার বুকিং, রেজিস্ট্রেশনের কাজও হয়ে গিয়েছিল। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে সব প্ল্যান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন অসীম। পর্যটকদের টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন।

    অসীম বলেন, ‘বছরে ১৮টি ভ্রমণের আয়োজন করে থাকি। তার মধ্যে পাঁচটিই কাশ্মীর। এখন যা পরিস্থিতি কাশ্মীরের সব ট্যুর বাতিল করতে হবে। কাশ্মীরের হোটেল মালিক, গাড়ির চালকদের অগ্রিম টাকা দেওয়া ছিল। ওঁরা ট্যুর বাতিল না-করার অনুরোধ করছেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখনই স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। পর্যটকদের টাকা ফেরত দিচ্ছি।’

    বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামে কোলাঘাটের এক ভ্রমণসঙ্গী বলেন, ‘পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঠিক আগের দিন ৫৬ জন পর্যটক নিয়ে ফিরে আসি। মে মাসে আবার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সবই তো ওলটপালট হয়ে গেল।’

    রবীন্দ্রনাথ দাস নামে এক ভ্রমণ সংস্থার মালিক বলেন, ‘পর্যটকদের নিয়ে এখনও শ্রীনগরে রয়েছি। আজ রাতে ট্রেন রয়েছে। গরমের ছুটিতে কাশ্মীর ট্যুর ছিল। কিন্তু সব বাতিল করে দিতে হলো।’

    ছবিটা একই রকম তমলুকেও। এখানকার বহু ট্র্যাভেল এজেন্ট জানিয়েছেন, কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পরে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রতিদিন বুকিং বাতিল হচ্ছে। যাঁরা আগাম বুকিং করেছিলেন, তাঁরাও এখন টাকা ফেরতের দাবি জানাচ্ছেন। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

    তমলুকের এক ট্যুরিস্ট এজেন্ট মধুসূদন প্রামাণিক বলেন, ‘তমলুক থেকে ৩৭ জনকে নিয়ে সামনের মাসে কাশ্মীর হয়ে অমরনাথ যাওয়ার কথা ছিল। সবার মেডিক্যাল টেস্টও হয়ে গিয়েছে। হোটেলের ঘরও বুকড হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত সব বাতিল করতে হচ্ছে। বহু টাকার লোকসান হয়ে গেল।’

  • Link to this news (এই সময়)