• স্কুল না নার্সারি, শিক্ষক থেকে পড়ুয়া মজে সবুজের অভিযানে
    এই সময় | ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • রনি চৌধুরি, বানারহাট

    পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সামগ্রীর মধ্যে গাছ লাগিয়ে সবুজ সংরক্ষণের বার্তা দিচ্ছে স্কুল। দেখলে মনে হতে পারে কোনও নার্সারিতে চলে এসেছেন। চারিদিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ভর্তি। বারান্দাজুড়ে রংবেরংয়ের গাছ। দড়িতে ঝুলছে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, মানিপ্ল্যান্ট। মন ভালো করা এই ছবি ডুয়ার্সের প্রত্যন্ত চা বলয়ের বানারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের।

    শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুলের বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে কোনও অট্টালিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু স্কুলে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন সবুজের কোলে চলে এসেছেন। স্কুল ভরিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা দিয়ে। গাছ তো অনেক স্কুলেই থাকে।

    কিন্তু বানারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে গাছগুলি লাগানো হয়েছে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কৌটা, শিশি, বোতলের মধ্যে। পুরোনো টায়ারের মধ্যেও গাছ ঝুলছে। তাছাড়া ফাটা প্লাস্টিকের বালতি,গামলাও ব্যবহৃত হয়েছে গাছ লাগানোর জন্য। এককথায় প্লাস্টিককেই এখানে নতুন করে ব্যবহার করা হয়েছে।

    স্কুলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস, মানিপ্ল্যান্ট, কমন আইভি, হেবে, লিলিগ্রাস, কর‍্যাসুলা, দুষ্প্রাপ্য লাইকোপিডিয়াম, বিভিন্ন ধরনের স্পাইডার প্ল্যান্ট–সহ বহু প্রজাতির গাছ। এখানেই রয়েছে হাড়জোড়া গাছ। সেই গাছের লতানো শাখা রাখবার জন্য বারান্দার ছাদে অদ্ভুত কায়দায় বাঁশের মাচা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকল্যান ভট্টাচার্য পড়ুয়াদের বলেছিলেন, বাড়িতে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের সামগ্রী আনতে। সেইমতো পড়ুয়ারা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, কৌটো, বালতি নিয়ে আসে। আর সেই পরিত্যক্ত সামগ্রীর মধ্যে গাছ রোপণ করে গোটা স্কুল সাজিয়ে তুলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধান শিক্ষক–সহ বাকি শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে নিয়মিত জল দেন, পরিচর্যা করেন। ছাত্রছাত্রীরাও ক্লাস শেষে জল এনে গাছের গোড়াগুলি ভিজিয়ে দেয়। ছাত্রছাত্রীরা এতটাই সচেতন যে, একজন ছাত্রছাত্রীও গত কয়েক বছরে একটি ডালও নষ্ট করেনি।

    প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের স্কুলে কম করে ১৫৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। গাছগুলি দেখলে মন ভালো হয়, ক্লান্তি কেটে যায়। ছাত্রছাত্রীদের গাছ সংরক্ষণের পাঠ দিই। শিক্ষক, পড়ুয়ারা ছাড়াও শিক্ষাকর্মী ও নৈশপ্রহরীও গাছ সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছেন।’

    পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এমডি লাবিস বলে, ‘স্কুলের বারান্দাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো আছে। খুব ভালো লাগে দেখতে। বড় দাদা– দিদিরা গাছগুলোতে জল দেয়। আমরা বাড়ি থেকে প্লাস্টিকের বোতল, কৌটা এনে দিই।’ স্কুল পরিদর্শক শেফালী ওঁরাও বলেন, ‘স্কুলের তরফে এই ধরনের উদ্যোগ যে নেওয়া যেতে পারে, তা বানারহাট স্কুলকে না দেখলে বোঝা যেত না। স্কুলে শুধু সবুজ আর সবুজ। মন ভালো হয়ে যায়।’

  • Link to this news (এই সময়)