ট্রেনে আলাপ থেকে প্রেম। তার পরে বিয়ে।৮ বছরের যমজ ছেলেমেয়ে রয়েছে। মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার বাজার এলাকার বাসিন্দা অমিত ধরকে বিয়ে করেছিলেন রিয়া। কিন্তু পরে কৌশিক প্রামাণিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ, ১ এপ্রিল নবগ্রামের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা ও সোনার গয়না নিয়ে সেই কৌশিকের টানেই কলকাতায় চলে আসেন রিয়া। সেই কৌশিকের বিরুদ্ধেই রিয়াকে খুনের অভিযোগ। নেপথ্যে? টাকা-পয়সা, গয়না। পুলিশ জেরায় জানতে পেরেছে, গয়নার লোভেই রিয়াকে খুন করেছে কৌশিক। বাগুইআটি ট্রলি ব্যাগ কাণ্ডে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে।
বারাসতের বাসিন্দা পেশায় মার্চেন্ট নেভি অফিসার কৌশিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রিয়ার। বারাসতে কৌশিকের নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু বাগুইহাটি এলাকায় ঘর ভাড়া করে থাকতেন। জেরায় কৌশিক জানিয়েছে, নবগ্রাম ছেড়ে আসার সময়ে রিয়া সঙ্গে করে ৩০ লক্ষ টাকার গয়না ও নগদ নিয়ে কৌশিকের ফ্ল্যাটে আসেন। সে কথা সে জানত। সে আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। নানা ভাবে সেই গয়না হাতানোর চেষ্টাও করে। ওই গয়না না দেওয়ার কারণেই আক্রোশে রিয়াকে খুন করে কৌশিক। প্রাথমিক ভাবে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।
অন্যদিকে স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর নবগ্রাম থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অমিত। অমিতের দাবি, ১৫ এপ্রিল তাঁকে বারাসত থেকে ফোন করেছিল রিয়া। সে খুব ‘ভালো আছে’ বলে ফোনে জানায় রিয়া। স্ত্রীকে খুঁজতে মুর্শিদাবাদ থেকে বাগুইআটি চলে আসেন অমিত। ২০ এপ্রিল থেকে বারাসতে একটি হোটেলে থাকা শুরু করে। এর মধ্যে ২২ এপ্রিল রিয়ার একটি ব্যাগ রাস্তা থেকে খুঁজে পান এক ফেরিওয়ালা। ব্যাগ থেকে নম্বর পেয়ে অমিতকে ফোন করেন। সেই সূত্রে ধরে বাগুইআটিতে পৌঁছে গিয়েছিল অমিত। পৌঁছে গিয়েছিল কৌশিকের ফ্ল্যাটেও। অন্যদিকে অপরহরণের অভিযোগের তদন্তে ফ্ল্যাটে পৌঁছে গিয়েছিল নবগ্রাম থানার পুলিশও।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাগুইআটি থানায় খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং তথ্য প্রমাণ লোপাটের ধারায় 279/25 মামলা রুজু হয়। ক্যাব চালকের বয়ানের ভিত্তিতে বাগুইআটি থানা ও বিধাননগর গোয়েন্দা বিভাগের দল যৌথভাবে বারাসতের ফরচুন টাওয়ার আবাসনে অভিযান চালালে এই ঘটনায় নাটকীয় মোড় আসে।
বাগুইআটি থানার পুলিশ জানতে পারে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার নবগ্রাম থানার একটি দল ইতিমধ্যে নবগ্রাম থানায় দায়ের হওয়া একটি অপহরণের মামলায় কৌশিক প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছে। এরপর বাগুইহাটি থানা নবগ্রাম থানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায় যে, কৌশিকের বিরুদ্ধে আরও এক ব্যক্তি (অমিত) স্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগ জমা করেছেন। কৌশিক জেরায় তাঁর অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।