শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মানব-দরদি রূপ। কিছুদিন আগেই দেখা গিয়েছিল কেঁদে আকুল পহেলগামের জঙ্গিহানায় নিহত বৈষ্ণবঘাটার বিতানের বাবা-মা। বিতান তাঁদের ছোট ছেলে। থাকতেন আমেরিকার ফ্লোরিডায়। কিন্তু সেখানে বসেই মা-বাবার দেখাশোনা করতেন বিতান।
বিদেশে থাকলেও অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সমস্ত ওষুধ খরচা বিদেশ থেকে পাঠাতেন বিতান। বাবা বীরেশ্বর অধিকারীর বয়স ৮৭ বছর, মা মায়া অধিকারীর বয়স ৭৫ বছর।
এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বারবার বিতানের মা-বাবার পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। ইতিমধ্যেই নিহত বিতানের স্ত্রী সোহিনীর সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। কাশ্মীরে নিহত বিতানের মা বাবার ওষুধের খরচা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বেহালা পূর্বের বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। এবার থেকে প্রতিমাসে ওষুধের খরচা বাবদ ১২০০০ টাকা তিনি দেবেন বলে জানিয়েছেন। বিতানের বৃদ্ধ বাবা মা যেন কোনওভাবেই ওষুধের খরচা নিয়ে আশঙ্কায় না থাকেন সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
রত্না চট্টোপাধ্যায় জানান তাঁর মা জীবিত নেই। বাবা আছেন কিন্তু তিনি অসুস্থ। মা-বাবার দায়িত্ব তাঁকে নিতেই হত। তাঁদের এই শুন্যতা তিনি অনুভব করতে চাইছেন। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চান বেহালা পূর্বের বিধায়ক।
কাশ্মীর যাওয়ার আগে বাবা-মাকে জানিয়ে গিয়েছিলেন বিতান। খুবই এক্সাইটেড ছিলেন কাশ্মীর ভ্রমণ নিয়ে। ফিরে এসেই আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই ফেরা আর হল না। মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে 'মিনি সুইৎজারল্যান্ড' বলে খ্যাত বৈসরণ উপত্যকায় জঙ্গিদের গুলিতে নিহত পাটুলির বিতান অধিকারী। ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন শোকাহত বাবা-মা। কেঁদে আকুল তাঁরা। কে দেখবেন এবার তাঁদের? মাথা চাপড়াচ্ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
কলকাতার বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা বিতান অধিকারী কর্মসূত্রে থাকতেন মার্কিন যুক্তরাষ্টের ফ্লোরিডায়। ৮ এপ্রিল স্ত্রী সোহিনী অধিকারী ও ছেলে রিদানকে দেশে ফেরেন। তারপর ১৬ এপ্রিল সপরিবারে কাশ্মীর ঘুরতে যান। কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার আগে নৈহাটিতে বড়মার পুজোও দেন। ২৪ এপ্রিল-ই তাঁদের ফেরার কথা ছিল।
দেহ ফিরিয়ে আনার সবরকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিতান অধিকারী ছাড়াও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ২ জন বাঙালি।
মোট ৩ জন বাঙালির মৃত্যু হয়েছে জঙ্গিহানায়। পহেলগাঁও হামলায় নিহত হয়েছেন বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা পেশায় সাবঅর্ডিনেট স্যাটিসটিক্যাল সার্ভস নামে এক সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্য়াল অফিসার সমীর গুহ।
একইসঙ্গে ছুটিতে ঘুরতে গিয়ে স্ত্রী-পুত্রের সামনেই জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরে কর্মরত মণীশ রঞ্জন। আদতে পুরুলিয়ার ঝালদার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে মণীশ থাকতেন হায়দরাবাদে।