‘স্যার কথা দিন, রাস্তায় শুয়ে কোনওদিন আন্দোলন করবেন না। আমরা বাড়িতে বসে চোখের জল ধরে রাখতে পারি না’, ছাত্র-ছাত্রীদের কথা শুনে অভিজিৎ স্যারের চোখের কোণটা জলে চিক চিক করে উঠল। কিন্তু ‘শিরে সংক্রান্তি’, সিলেবাস শেষ করতে হবে। সবমিলিয়ে অঙ্ক কষানোয় মন দিলেন তিনি।
যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা পৌঁছে গিয়েছে বুধবার রাতেই। ইতিমধ্যে আন্দোলন ছেড়ে স্কুলে ফিরেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। বৃহস্পতিবার তাঁদের স্কুলে যেতে হয়েছিল নিজেদের নথি জমা দেওয়ার জন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় মান্নার আবেদনে সাড়া দিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) স্কুলে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের ভদ্রকালী গান্ধী বিদ্যাপীঠের পাঁচ ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকা। সুপ্রিম কোর্টের গত ৩ এপ্রিলের রায়ে তাঁরা ৫ জনেই চাকরি হারিয়েছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ নির্দেশেই (১৭ এপ্রিলে দেওয়া নির্দেশ) ‘যোগ্য’ শিক্ষক হিসেবে ৫ জনই ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন।
অবশেষে সেই নির্দেশ মেনে স্কুলে গিয়েছিলেন ভদ্রকালী গান্ধী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক অভিজিৎ গিরি, দেবাশিস মালি, আশিস সিং, ইপ্সিতা ভুঁইয়া, সুপর্ণা জানা। শুক্রবারও তাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন।
এ দিন অভিজিৎ বলেন, ‘বুধবার রাতেই এসএসসি ভবনের সামনে আন্দোলনস্থল থেকে ফিরেছি। বৃহস্পতিবার আমরা টিআইসি-র ডাকে নিজেদের সমস্ত ডকুমেন্টস জমা করতে গিয়েছিলাম। ক্লাস নেওয়ার কথা সেই ভাবে ভাবিনি। মনটাও খুব একটা ভাল ছিল না। একটাই কথা মনে হচ্ছিল, ৩১ ডিসেম্বরের পর কি আমরা এই স্কুলের শিক্ষক থাকতে পারব না? তবে পড়ুয়াদের দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়। আমরা কয়েকজন ক্লাসেও যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘হকের চাকরিটার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিল। না হলে কে আর ছাত্র-ছাত্রীদের ছাড়তে চায়।’ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর, রীতিমতো চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট দাঁতনের মালযমুনা গ্রামের বাসিন্দা অভিজিতের। স্নাতকোত্তরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। সেই অভিজিৎই গত কয়েকদিন ধরে মেদিনীপুর শহরে চলা যোগ্য শিক্ষকদের আন্দোলনের ‘মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন। রাস্তায় শুয়ে আন্দোলন থেকে ডিআই-কে ঘেরাও, অভিজিৎ ছিলেন অগ্রণী।
তাঁর রাস্তায় শুয়ে আন্দোলনের দৃশ্য দেখেছেন পড়ুয়ারাও। এ দিন টিফিনের সময় প্রিয় স্যারকে কাছে পেতেই জড়িয়ে ধরে তারা। ‘এই সময় অনলাইন’-কে অভিজিৎ বলেন, ‘রাজেশ, বিকাশরা তো রীতিমত চেপে ধরল আমাকে। বলল স্যার কথা দিন এ ভাবে রাস্তায় শুয়ে কোনওদিন আন্দোলন করবেন না। চোখে জল এসে গেল ওদের কথা শুনে।’
শুধু অঙ্কের অভিজিৎ স্যারই নন, এ দিন সুপর্ণা ম্যাডাম, দেবাশিস স্যার, আশিস স্যারদের দেখে আপ্লুত ছাত্রছাত্রীরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় মান্না বলেন, ‘এই শিক্ষকরা আমাদের স্কুলের সম্পদ। ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। ওঁরা ফিরে আসায় খুশি হয়েছি। যোগ্য শিক্ষকরা তাঁদের চাকরি স্থায়ী ভাবে ফিরে পান, এটাই এখন চাইছি।’
(তথ্য সহায়তা: মণিরাজ ঘোষ)