• ১৪ বছর পর ‘বনবাস’ শেষ, সোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে বাড়ি ফিরলেন সারেঙ্গার সোমনাথ
    এই সময় | ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ‘আমি বেঁচে আছি’। ১৪ বছর পর বাড়ি ফিরে প্রথমে স্ত্রীকে এ কথাই বললেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা সোমনাথ মণ্ডল। ১৪ বছর আগে বাজার করতে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেননি বাঁকুড়ার সারেঙ্গার বামনীশোল গ্রামের বাসিন্দা সোমনাথ। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সব আশা ত্যাগ করেছিলেন। তবে ১৪ বছর পর সোশাল মিডিয়া ও কয়েকজন মানুষের সাহায্যে তিনি ফিরে এলেন নিজের পরিবারে। তাঁকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এত বছর পর কী ভাবে নিজের পরিবারে ফিরলেন সোমনাথ?

    তাঁর বাড়ি ফেরাটা অনেকটা সিনেমার গল্পের মতো। আর এই গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সোশাল মিডিয়া, রেলের কয়েকজন কর্মী, বাঁকুড়ার সীমলাপাল ও সারেঙ্গা ব্লকের কয়েকজন যুবক, পুরুলিয়ার নিমতাড়া গ্রামের বাসিন্দা-সহ মধ্যপ্রদেশের গঞ্জোবাসদা স্টেশনে কর্মরত প্রণব মাঝি। মানসিক ভারসাম্যহীন সোমনাথ মণ্ডলকে কিছুদিন আগে মধ্যপ্রদেশের গঞ্জোবাসদা রেলওয়ে স্টেশনের পাশের সরাই স্টেশনে প্রথম দেখতে পান কয়েকজন ব্যক্তি। সেখানে অজানা অচেনা এক ব্যক্তিকে গত কয়েকদিন ধরে বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় রেলের কর্মীদের। তাঁরা সোমনাথের সঙ্গে কথা বলে তাঁর ভাষা বুঝতে না পেরে পাশের স্টেশনে কর্মরত পুরুলিয়ার নিমতাড়া বাসিন্দা প্রণব মাঝিকে ডাকেন। প্রণব সরাই স্টেশনে গিয়ে সোমনাথ মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তিনি সারেঙ্গার বামনীশোল গ্রামের বাসিন্দা।

    প্রণববাবু তাঁর আত্মীয় তুষার পালকে ফোনে পুরো বিষয়টি জানিয়ে সোমনাথ মণ্ডলের ছবি পাঠান। তুষার তাঁর এক বন্ধু যাদব মুখোপাধ্যায়কে ২০ এপ্রিল বিষয়টি জানান। যাদব সোমনাথের ছবি এবং পুরো ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। সেই পোস্ট দেখে অনেকেই বামনীশোল গ্রামে সোমনাথ মণ্ডলের পরিবারকে খবর দেন। এর পর সোমনাথবাবুর ছবি দেখে চিনতে পারেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সোমনাথের ছেলে রাহুল যোগাযোগ করেন যাদব মুখোপাধ্যায় ও তুষার পালের সঙ্গে। সেখান থেকে মধ্যপ্রদেশে কর্মরত প্রণব মাঝির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে সোমনাথের ছেলে জানান, তাঁর বাবার মাথায় একটা কাটা দাগ এবং ডান হাতে একটি ট্যাটু আছে। যেখানে সোমনাথ বাবুর নিজের নাম লেখা রয়েছে।

    এর পর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে সোমনাথ মণ্ডলের দীর্ঘদিনের চুল দাঁড়ি কেটে তাঁকে পরিষ্কার করানোর পর দেখা যায় তাঁর মাথার কাটা দাগ ও হাতের ট্যাটুটি। সমস্ত সন্দেহের অবকাশ মিটিয়ে সোমনাথকে আনতে সারেঙ্গা থেকে মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সেখানে সমস্ত প্রশাসনিক কাজ সেরে দীর্ঘ ১৪ বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে আসেন সোমনাথ মণ্ডল। স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলেন সোমনাথবাবুর স্ত্রী। বাবাকে যে এভাবে কখনও ফিরে পাবেন তা এখনও ভাবতে পারছেন না সোমনাথবাবুর সন্তানরা।

  • Link to this news (এই সময়)