নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা এবং সংবাদদাতা, তেহট্ট: পহেলগাঁওয়ে নারকীয় জঙ্গি হামলার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হন প্যারাকমান্ডো ঝন্টু আলি শেখ। শোকের ছায়া নামে নদীয়ার তেহট্টে। শহিদ জওয়ানের কফিনবন্দি দেহ শুক্রবার এসে পৌঁছল কলকাতায়। বিমানবন্দরেই সেনাবাহিনীর তরফে দেওয়া হল গার্ড অব অনার। রাজ্য সরকারের পক্ষে শহিদ জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তও। আজ, শনিবারই পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য হওয়ার কথা।
এদিন রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরে শহিদ ঝন্টু আলি শেখের কফিনবন্দি দেহ নিয়ে অবতরণ করে বিশেষ বিমান। রাতেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় সেনার গাড়ি। দিনভর শোক বুকে চেপেই শহিদ ঝন্টু আলি শেখকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছে তেহট্ট। সর্বত্র বিষাদঘন পরিবেশ। তার মধ্যেই গ্রামের বীর সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন গ্রামবাসীরা, অবসরপ্রাপ্ত সেনারা। তৈরি করা হয়েছে শহিদ বেদি। সেখানে রাখা হয়েছে ঝন্টুর প্রতিকৃতি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মোক্ষম প্রত্যাঘাতের স্লোগানও উঠছে। ভিড় জমছে শহিদের বাড়িতে। আত্মীয়-স্বজন, পড়শি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আসছেন। ঝন্টুর পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সকালে দেখা করতে আসেন নদীয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তারান্নুম সুলতানা মীর, বহরমপুরে প্রাক্তন সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী, বিজেপির নদীয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস প্রমুখ। জানা গিয়েছে, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঝন্টু থাকতেন আগ্রায়। এদিন সকালে প্যারাকমান্ডো বাহিনীর দুই জওয়ান তাঁদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাথরঘাটাতে পৌঁছন। সঙ্গে আসেন ঝন্টুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শহিদের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমাকে প্রথমে স্বামীর মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি। জানানো হয়, ওর কাঁধে গুলি লেগেছে। সেনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পারি, আমার স্বামী মারা গিয়েছে।’ বলতে বলতেই আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। ঝন্টুর শ্যালক রাসেল মণ্ডল বলছিলেন, ‘কাশ্মীরের অবস্থা দেখে আমি বুধবার জামাইবাবুকে মেসেজ করে জানতে চেয়েছিলাম, সব ঠিক আছে তো ? তখন উত্তর পাইনি। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জামাইবাবু মেসেজেরে উত্তরে জানান, সব ঠিক আছে। তার পর আমি কাজে চলে যাই। বেলা দশটা নাগাদ বাবা ফোন করে জানান, জামাইবাবুর কাঁধে গুলি লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গেই কাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসি। ট্রেনে আমার এক বন্ধু জানায় জামাইবাবু শহিদ হয়েছেন।’ ঝন্টুর প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী সাহাবুদ্দিন মণ্ডল বলছিলেন, ‘শহিদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছি। ঝন্টুর বাড়ির সামনে মঞ্চ বাঁধা হচ্ছে। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হবে।’