নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, ধূলিয়ান, সূতি ও রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় তাণ্ডবের জেরে বিএসএফ এবং পুলিস ওই উপদ্রুত এলাকা সামাল দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই সুযোগে সীমান্তবর্তী এলাকায় ফের মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে পাচার করতে উঠেপড়ে লেগেছে দুষ্কৃতীরা। বাংলাদেশ অশান্ত হওয়ার পর ওপারে ইয়াবা ট্যাবলেট যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় ফের ওই মাদক ট্যাবলেট পাচার হচ্ছে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ফের একদল দুষ্কৃতী বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের পরিকল্পনা করে। হেরোইনের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে বাংলাদেশে পাচারের আগেই ধরা পড়ে যায় এক মাদক কারবারি। ভগবানগোলা থানার চরবাবুপুর পূর্বপাড়া থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সন্তু শেখকে ৩০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ধরা হয়। তার কাছ থেকে ৩২০০ গ্রাম হেরোইনও পাওয়া যায়। উদ্ধার হওয়া মাদকের মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। ধৃত যুবক দিনমজুরের কাজ করার পাশাপাশি নিয়মিত মাদকের কারবার চালায় বলে পুলিস জানতে পেরেছে। বাংলাদেশের কিছু মাদক কারবারির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের চাহিদামতো এপারের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাল কিনে এনে সরবরাহ করে সে। এতদিন কাশির সিরাপ ও হেরোইনের কারবার করছিল। ইদানীং ইয়াবার চাহিদা বাড়ায় ওপারে সাপ্লাই দিচ্ছে সে। বাংলাদেশে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় ইয়াবার চাহিদা বরাবরই বেশি। তবে ওপারে অশান্তি শুরুর পর থেকে মুর্শিদাবাদ সীমান্ত লাগোয়া এলাকাগুলিতে কড়া নজরদারি চলছিল। সে কারণে অধিকাংশ জায়গায় পাচার রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে দাবি বিএসএফের। তবে, এদিন ফের বিপুল পরিমাণে ইয়াবা উদ্ধার হওয়ায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং পুলিসের উদ্বেগ বাড়ছে।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ধৃত পাচারকারী স্থানীয় মাদক কারবারিদের সঙ্গে মিলে মাঝেমধ্যেই পাচারের কাজ করত। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওইদিন তাকে ধরা হয়। বাংলাদেশে পাচারের আগের মুহূর্তেই আটক করে তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে ৩ কেজি ২০০ গ্রাম হেরোইন এবং ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাজেয়াপ্ত মাদকদ্রব্যের বাজারমূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ওই এলাকা দিয়ে কখনো ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার হয়নি।
ইয়াবা আদতে একটি ট্যাবলেট। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে এই ট্যাবলেট তৈরি। মেথামফেটামিন, সংক্ষেপে মেথ হলো একটি তীব্র নেশা উদ্রেককারী রাসায়নিক বস্তু। দক্ষিণ এশিয়ার থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশের রেভ পার্টিতে ইয়াবা ট্যাবলেট বহুল প্রচলিত। দক্ষিণ এশিয়ার ওই দেশগুলি থেকেই ইয়াবা ট্যাবলেট মাদক কারবারিদের মাধ্যমে চোরাপথে ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে। একজন ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তি এই ট্যাবলেট বাষ্প করে কিংবা গুঁড়ো করে নাক দিয়ে টেনে গ্রহণ করে। এই ট্যাবলেট বিভিন্ন রংয়ের হতে পারে। বাংলাদেশে ইয়াবা জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল, এটি সেবনের পর নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে বাহ্যিক কোনও পরিবর্তন দেখা যায় না। মাদক সেবনকারীদের দাবি, একজন মদ্যপায়ী ব্যক্তির মুখে মদের গন্ধ থাকে। অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবনের কারণেও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক, বাহ্যিক ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়ে না। ট্যাবলেট জাতীয় ও আকারে অনেক ছোট হওয়ায় এটি সহজে বহনযোগ্য। সেজন্য ইয়াবার প্রতি ঝোঁক বেশি যুবসমাজের।