বিচারে গতি আনতে সাক্ষী তালিকায় লাগাম টানার নির্দেশ দিলেন সিপি
বর্তমান | ২৬ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চার্জশিটে অহেতুক সাক্ষী তালিকাকে দীর্ঘায়িত করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এতে বিচার প্রক্রিয়ায় অযথা দেরি হয়। যার ফলে খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক গলে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন অপরাধীরা। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা চার্জশিটে সাক্ষী বাছাই নিয়ে একটি গাইড লাইন চালু করেছেন। লালবাজার সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।
লালবাজারের এক সূত্র জানাচ্ছে, সাম্প্রতিক অতীতে বিচার শেষ না হওয়ায় একবালপুরে মা ও দুই মেয়ে খুনে মূল অভিযুক্ত সিকান্দার ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছে! তেমনি ২০১১ সালে বালিগঞ্জে জোড়া খুনের মামলাতেও জামিন পেয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত। আবার, লেক থানা
এলাকায় দুই বালিকা জোড়া খুনে মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মূল অভিযুক্তও জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে!
জারি করা লিখিত নির্দেশিকায় সিপি বলেছেন, ‘চার্জশিটে অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীকে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। একই বিষয়ে একাধিক সাক্ষী রাখা যাবে না। সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী নয়, অবাঞ্ছিত সাক্ষীকে তালিকায় রেখে ভিড় বাড়ানোর দরকার নেই। অপরাধের তদন্ত শেষে তদন্তকারী অফিসার চার্জশিট পেশের আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং ডিসি’রা ভালো করে সাক্ষী তালিকা খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর আদালতে চার্জশিট জমা দিতে হবে।’
সাক্ষী বাছাই নিয়ে সিপির এই গাইড লাইন ঘিরে বাহিনীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সারা জীবন কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা এক অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকের কথায়, ‘কলকাতার আমেরিকান সেন্টার হত্যাকাণ্ডে চার্জশিটে চারশোর বেশি সাক্ষী রয়েছে। তেমনই রশিদ খানের বউবাজার বিস্ফোরণ মামলাতে সাক্ষী তালিকায় ২৫০ জনের নাম ছিল। হালফিলে বড়তলা থানার ফুটপাতে সাত মাসের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের মামলাতে সাক্ষী তালিকায় মাত্র ২৫ জনের নাম ছিল। সমস্যা হচ্ছে, একটি বিষয়ে একজন সাক্ষী রাখা হলে, যে কোনও সময় ‘সাক্ষী বিরূপ’ হতে পারে। আবার দীর্ঘদিন মামলা
চললে, সাক্ষী মারা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মামলার ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।’
কলকাতা পুলিসের ভুক্তভোগী তদন্তকারী অফিসারদের অভিযোগ, ‘আদালতের দীর্ঘসূত্রতার জেরে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। করোনার পর আদালতগুলিতে মামলার পাহাড় জমেছে। সেদিকে কারও নজর নেই। যার সুযোগ নিচ্ছেন একদল অপরাধী আর অসাধু আইনজীবী। নানা অজুহাতে মামলার শুনানি ভেস্তে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সময় নষ্ট করার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন আদায় করা হচ্ছে। ’