• চোখের জলে বীর শহিদ ঝন্টুকে শেষ শ্রদ্ধা তেহট্টবাসীর
    প্রতিদিন | ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: চিরঘুমে গ্রামের ছেলে। চোখের জল বাঁধ মানছে না কারও। বীর শহিদ জওয়ানকে শেষবার দেখতে তেহট্টের পাথরঘাটায় লোকে লোকারণ্য। প্রায় সকলেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। চোখের জল মুছতে মুছতে সকলের মুখে একটাই সুর, ‘ভারতমাতা কি জয়’। ফুল, অশ্রুতে থমথমে গোটা এলাকা।

    পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। তারই মাঝে উধমপুরে শুরু হয় সেনা-জঙ্গির গুলির লড়াই। সেই অপারেশনেই শহিদ হন বাংলার বীর সন্তান ঝন্টু আলি শেখ। গত বৃহস্পতিবার দুঃসংবাদ পান তাঁর পরিবারের লোকজন। নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাসিন্দা ঝন্টুর দেহ শুক্রবার রাতে পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দর। সেখান থেকে কফিনবন্দি দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বারাকপুর সেনা ছাউনিতে। সেখানে গান স্যালুট দেওয়া হয় তাঁকে।

    শনিবার সকালে পাথরঘাটার গ্রামের বাড়িতে ঝন্টুর কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয়। ততক্ষণে বাড়ির সামনে ভিড় যেন উপচে পড়ছে। সকলের চোখে জল। মুখে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান। বৃদ্ধ বাবা ছেলের কফিনবন্দি মরদেহের সামনে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। চোখের জল বাঁধ মানছে না মায়ের। যাকে জন্ম থেকে কোলে, পিঠে করে বড় করেছেন, সেই সন্তানের মৃত্যু মানতে পারছেন না বৃদ্ধ দম্পতি।

    সদ্য স্বামীহারা ঝন্টুর স্ত্রীর চোখে জল। তবে বুকে যেন আগুন জ্বলছে। তিনি বলেন, “আমার সন্তানরা বাবাকে হারিয়েছে। দোষীর কঠোর শাস্তি চাই।” বলে রাখা ভালো, গত ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তারই মাঝে সংসার পাতেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানও রয়েছে তাঁর। বছর দেড়েক আগে কাশ্মীরে পোস্টিং। তাই স্ত্রী ও দুই সন্তানও কাশ্মীরেই থাকতেন তাঁরা। ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে বাবা-মায়ের কাছে আসেন ঝন্টু। সেই শেষবার। তারপর যে এভাবে কফিনবন্দি হয়ে গ্রামের ছেলে ফিরবেন, তা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি স্থানীয়রা। শোকস্তব্ধ তাঁরাও। ঝন্টুর দাদাও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। ছোট ভাইয়ের কফিনবন্দি দেহ নিজের কাঁধে করে গ্রামে নিয়ে ফেরেন তিনি। শহিদ ভাইয়ের আত্মত্যাগে গর্বিত তাঁর দাদা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)