কফিন বন্দি দেহটা যখন বাড়ির দুয়ারে পৌঁছল, তখন তিল ধারনের জায়গা নিয়ে। মা-বাবা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে শুয়ে পড়েছেন। উপস্থিত গ্রামবাসীদের চোখে জল। যে ছেলেটা গ্রামেরই মাঠে দৌড় প্র্যাকটিস করতো, আড্ডা মারত পাড়ার মোড়ে, সেই ছেলের নিথর দেহ ঢুকছে বাড়িতে। কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হয়েছে সকলের প্রিয় ঝন্টু। শনিবার গান স্যালুট শেষ বিদায় জানানো হলো তাঁকে। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও।
শনিবার সকালে নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় বীর সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের দেহ। সকাল থেকেই কয়েক হাজার মানুষ রাস্তার দু’পাশে অপেক্ষায় ছিলেন। কফিন বাড়ির উঠোনে এনে রাখতেই ঝন্টুর স্ত্রী ঝুমা শেখকে আর আটকে রাখা যায়নি। স্বামীর দেহ জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। সামলানো যায়নি মা-বাবাকেও। জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয় শহিদের দেহ। সেনার নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হয়।
গ্রামবাদীদের মুখে একটাই কথা — যে ভাবে কাশ্মীরে জঙ্গিরা নৃশংসভাবে ঝন্টু আলি শেখকে হত্যা করেছে, ঠিক সেই ভাবেই জঙ্গিরাও যাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ভারতীয় সেনার গুলিতে। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় সরকার পাক মদত পুষ্ট জঙ্গি বাহিনীদের বিরুদ্ধে কত তাড়াতাড়ি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা এর বদলা চাই। আমাদের ছেলেটা চলে গিয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এর যোগ্য জবাব দিতে হবে। যতদিন না বদলা হচ্ছে, আমাদের শান্তি পাব না।’
প্রসঙ্গত, পহেলগামে হামলার পরহে কাশ্মীরের উধমপুরে তল্লাশি অভিযান চালানোর সময়ে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই টিমেই ছিলেন ঝন্টু। ২৪ তারিখ শহিদ হন তিনি। ইতিমধ্যেই ঝন্টু আলি শেখের শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। কৃষিজীবী পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার থেকে ছোট ঝন্টু। তাঁর বড় দাদাও সেনায় কর্মরত রয়েছেন। বৃদ্ধ মা-বাবা দু’জনেই অসুস্থ। বাড়ির ছোট ছেলের প্রয়াণে বাকরুদ্ধ হয়েছেন সকলেই।
তৃণমূলের তরফে একটি বার্তায় জানানো হয়েছে, ঝন্টু আলি শেখের মরদেহ কৃষ্ণনগরের পাথরঘাটায় তার বাড়িতে পৌঁছেছে। আমাদের বিধায়ক রুকবানুর রহমান, উজ্জ্বল বিশ্বাস, তাপস কুমার সাহা এবং সাংসদ মহুয়া মৈত্র শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। গভীর শোকের এই মুহূর্তে আমাদের প্রার্থনা তাঁর পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। সিপিএমের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘শহিদ ঝন্টু আলি শেখের বাড়িতে তাঁর মরদেহে CPIM-এর পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানান শতরূপ ঘোষ ও এস.এম. সাদি। বীর শহিদ ঝন্টু আলি শেখ অমর রহে।’