এই সময়: ২৬–এর বদলায় ‘২৬০টি দেহ’ চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এবং সেটা দ্রুত। সুকান্ত মজুমদারের হুঁশিয়ারি, গোটা বিশ্ব এ বার তাকিয়ে দেখবে পাকিস্তানের কী হাল হয়! দিলীপ ঘোষের আশা, ভারত এমন জবাব দেবে, যাতে দেশে আর কখনও সন্ত্রাসবাদী হামলা না হয়।
গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে ২৬ জনের, যাঁদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক। এই ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা বিশ্ব। গোটা দেশ চাইছে, সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের মোক্ষম জবাব দিক ভারত। ঘটনার পরের দিনই কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘জি়রো টলারেন্স’ অবস্থান।
ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপও করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে বঙ্গ–বিজেপির একাংশের হুমকি–হুঁশিয়ারির দাপট পিছনে ফেলে দিয়েছে দেশের রাজধানীতে বসে থাকা শীর্ষ বিজেপি নেতাদেরও। বাংলার বিজেপি নেতা–কর্মীদের কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত যুদ্ধও ঘোষণা করে দিয়েছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পদ্ম–ব্রিগেডের অনেকে অবশ্য মনে করছেন, কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নিন্দা, প্রতিবাদ করতেই হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের থেকেও বেশি হুঙ্কার দেওয়া কোনও ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
বুধবার কলকাতা বিমানবন্দরে জঙ্গি হানায় নিহত দুই বাঙালি পর্যটককে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘ওরা ২৬ জনকে মেরেছে। আমরা ২৬০টি দেহ চাইছি।’ সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁর সংযোজন, ‘সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করছি। আমরা এটা চাই। ইজ়রায়েল গাজ়াকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। ভারতে যারা সন্ত্রাস করছে, তাদেরও মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া উচিত।’ শুক্রবার পাকিস্তানকে নিশানা করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘এ বার গোটা বিশ্ব দেখবে পাকিস্তানের কী অবস্থা করা হয়। এখনই ওরা ভয় থরথর কাঁপছে।’
প্রত্যাঘাতের মোক্ষম সময় কখন, তা বাতলে তিনি বলেন, ‘যখন মারার তখনই মারব। যখন তৈরি থাকবে না, তখন মারব। এখন তো ওরা প্রস্তুত আছে, কম লাগবে। এমন সময়ে মারব, যখন একটা থাপ্পড়েই বাবার নাম খগেন হয়ে যাবে।’ বঙ্গ–বিজেপির শীর্ষ নেতা দিলীপও বলেছেন, ‘এমন কিছু ভারত নিশ্চয়ই করবে, যাতে এটাই কাশ্মীরে শেষ হিংসার ঘটনা হয়।’
এ রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতাদের এতটা উচ্চগ্রাম হুমকিতে আপত্তি দলের একাংশের। তাদের যুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলার বিজেপি নেতাদের কোনও দায়বদ্ধতা না–ও থাকতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আছে। তাই মোদী সরকার কী ভাবে সন্ত্রাসের জবাব দেবে, সেটা না জেনে এখনই ‘মেরে দেবো, গুঁড়িয়ে দেবো’ গোছের হুমকি না দেওয়াই ভালো। এক প্রবীণ বিজেপি নেতার কথায়, ‘শুধু হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক এককাট্টা করার জন্য ভারত সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে চালানো ঠিক হচ্ছে না। সন্ত্রাস মোকাবিলায় নরেন্দ্রী মোদী, অমিত শাহদের রণকৌশল কী হতে চলেছে, সেটা কলকাতায় বসে ঘোষণা করছেন আমাদের পার্টির রাজ্য নেতারা! দুইয়ে দুইয়ে চার না–হলে তখন কিন্তু আমাদের ঢোঁক গিলতে হবে।’
তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠুকে ব্যাট করার যুক্তি মানতে চাইছে না বঙ্গ–বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই। তাঁদের পর্যালোচনা, গোটা দেশ ফুঁসছে। সবাই চাইছে প্রত্যাঘাত হোক। ‘পাবলিক পালস’ মাথায় রেখেই রাজনীতি করতে হয়। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘কাশ্মীরে জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছে। আমরা সেটাই বাংলার মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই। যে হিন্দুরা সেকুলার সেজে এখনও তৃণমূল বা সিপিএমকে ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের ঘুম ভাঙাতে চাই। কেন্দ্রীয় সরকার তার জায়গা থেকে জবাব দেবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব মুসলিম মৌলবাদ সম্পর্কে বাংলার মানুষকে সচেতন করা। সে কাজই চলছে। কোনও সমস্যা নেই।’