• নার্সদের ‘মায়া’ কাটিয়ে হোমেই ট্যাংরার প্রতীপ
    এই সময় | ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সোমনাথ মণ্ডল

    চোখ ছলছল। একদিকে হাসপাতালের নার্স–আয়ারা, অন্যদিকে বছর চোদ্দোর প্রতীপ। প্রায় মাস দুয়েক এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছে দে–পরিবারের এই কিশোরের। মাকে হারালেও, এ ক'দিন ওঁদের কাছেই পেয়েছিলেন মায়ের স্নেহ। শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল ছাড়ার সময়ে প্রতীপের ভেজা চোখ দেখে সেই নার্স–আয়ারা বলে উঠলেন, 'মন দিয়ে পড়াশোনা করিস। ভালো থাকিস বাবা...।'

    তিন দিন আগেই হাসপাতাল থেকে প্রতীপকে রিলিজ়ের সবুজ সঙ্কেত মিলেছিল। কিন্তু এনআরএস হাসপাতালের ফ্রেজার বিল্ডিং থেকে যেতে মনই চাইছিল না প্রতীপের। তবে একদিন না একদিন যেতে তো হবে। সরকারি হাসপাতালে কারও স্থানীয় ঠিকানা কি হয়! শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টা নাগাদ আসে সেই মুহূর্ত। চিকিৎসক, নার্স–আয়াদের কাছ থেকে বিদায় নিল প্রতীপ। আপাতত ঠিকানা একটি বেসরকারি হোম।

    ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনটে নাগাদ ইএম বাইপাসে অভিষিক্তার মোড়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন প্রণয় দে, তাঁর পুত্র প্রতীপ এবং প্রণয়ের ভাই প্রসূন দে। তাঁদের উদ্ধারের পরে আসল ঘটনা সামনে আসে। জানা যায়, ট্যাংরার বাড়িতে পড়ে রয়েছে পরিবারের তিন মহিলার দেহ। পরে প্রসূন দাবি করেন, স্ত্রী রোমি এবং বৌদি সুদেষ্ণাকে খুন করেছেন তিনি। এমনকী কন্যা প্রিয়ম্বদাকে পায়েসের মধ্যে বিষ মিশিয়ে খুন করেন তিনিই। নেপথ্যে আর্থিক অনটন এবং বিপুল ঋণের বিষয়টি উঠে আসে।

    প্রতীপকেও খুনের চেষ্টা হয়েছিল, তবে সে বেঁচে যায়। এরপরে মেট্রোর পিলারে গাড়ি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারার পরে বাবা–কাকার সঙ্গে রুবির কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল প্রতীপকে। সেখান থেকে এনআরএস হাসপাতাল। কাকা প্রসূন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। সূত্রের খবর, প্রতীপের বাবা প্রণয় এখনও হাসপাতালেই রয়েছেন। আরও কিছুদিন হয়তো তাঁকে থাকতে হবে। এ দিন ছাড়া পাওয়ার আগে বাবার সঙ্গে প্রতীপের কথা হয় তার। দু'জনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। প্রতীপ বাবাকে বলে, 'বাবা আমি চলে যাচ্ছি।' তখন তাকে প্রণয় বলেন, 'হ্যাঁ যাও। তুমি ভালো থাকবে। কোনও রকম অসুবিধা হবে না। চিন্তা কোরো না। সবাই তোমার পাশে থাকবে।'

    আপাতত প্রতীপকে একটি বেসরকারি হোমে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ওই হোমের তরফেই শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। এদিন থেকেই নতুন ঠিকানার বাসিন্দা হচ্ছে প্রতীপ। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যায় সে। তবে আগের স্কুল থেকেই নতুন জীবন শুরু করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয়। আপাতত কিছুদিন বিশ্রাম। তার পর কী...। প্রশ্ন রয়েই গেল!

  • Link to this news (এই সময়)