• রাজ্যের সব ভাগাড়ে হবে প্রসেসিং প্লান্ট, জৈব সার উৎপাদন, ফিরবে সুস্থ পরিবেশ
    বর্তমান | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায় , বারাকপুর: হাইওয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে দূরপাল্লার বাস। যাত্রীরা কেউ ঘুমে আচ্ছন্ন, কেউ মোবাইলে। এমন সময় নাকে এসে লাগল ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ। কেউ রুমাল বের করে, কেউ হাতেই নাক-মুখ ঢাকলেন। কোথা থেকে আসছে এত দুর্গন্ধ? বাসের জানালা দিয়ে চোখ পড়ল পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে থাকা আবর্জনার স্তূপে। রাস্তার পাশেই পুরসভার ভাগাড়! তাই দুর্গন্ধে এমন জেরবার অবস্থা।

    পথেঘাটে বেরিয়ে এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে অনেককেই। আর যাতে কাউকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হতে হয়, তারই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজ্যের সব ভাগাড়ে বসবে প্রসেসিং প্লান্ট। পচনশীল বর্জ্য ও প্লাস্টিক বা অপচনশীল বর্জ্য পৃথকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরি হবে জৈব সার এবং প্লাস্টিকের দানা বা গ্র্যানিউল। সেই দানা থেকে তৈরি হবে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন সামগ্রী। ফলে একদিকে যেমন প্লাস্টিকের মতো ক্ষতিকর উপাদান পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে, তেমনই পচনশীল বর্জ্য থেকে উৎপন্ন হবে জৈব সার, বায়ো গ্যাস। সেই সঙ্গে দূষণ, দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে মুক্ত হবে ভাগাড়সংলগ্ন চত্বর। 

    পুর ও নগরোন্ননমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, রাজ্যের ১২৮টি পুরসভারই ভাগাড়ে চালু হবে প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট। ইতিমধ্যে ১৪টি পুরসভায় কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে ৯১টি পুরসভায় পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ। অনেক সময় এই ধরনের প্লান্ট চালানোর জন্য পর্যাপ্ত বর্জ্যের জোগান থাকে না। তাই প্রয়োজনে দু’-তিনটি পুরসভার জঞ্জাল এক জায়গায় করে প্রসেসিং করা হবে। 

    নগরায়ন বৃদ্ধির সঙ্গেই জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন পুরসভায় এতদিন যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো, সেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ধারণক্ষমতা অতিক্রান্ত। তাই রাস্তার ধারেই জমছে আবর্জনার স্তূপ। প্লান্টগুলি চালু হলে এই সমস্যারও স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশাবাদী সরকার। ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস, ২০১৬’ অনুযায়ী শহরগুলিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধি তৈরি করেছে পুরদপ্তর। ইতিমধ্যে সেই বিধি পুরসভাগুলিকে পাঠিয়ে বলা হয়েছে, প্রতি বাড়ি থেকে পচনশীল ও অপচনশীল জঞ্জাল পৃথকভাবে সংগ্রহ করতে হবে। বলে দেওয়া হয়েছে, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে জাতীয় পরিবেশ আদালত পুরসভাগুলিকে জরিমানা করতে পারে। 

    প্রসঙ্গত, রাজ্যের তরফে চিহ্নিত ১২৩টি ভাগাড়ে বহু বছর ধরে জমে থাকা বর্জ্যের মোট পরিমাণ ছিল ১৯৮ লক্ষ মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত ২৮টি পুরসভার ৪২টি ভাগাড় বিজ্ঞানসম্মতভাবে সম্পূর্ণ সাফ করা হয়েছে। এভাবে মোট ৭৬.৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পর পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা গিয়েছে। পুরমন্ত্রী জানান, জঞ্জাল অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানসম্মতভাবে করতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে কলকাতা, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বৈদ্যবাটি, চাঁপদানি, শ্রীরামপুর, কোন্নগর, বরানগর, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, দমদম, নিউ বারাকপুর, খড়গপুর, হলদিয়া পুরসভায় কাজ শুরু হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)