অনুমোদন নিয়ে কাজ করেনি পুরসভা, অজুহাতে দায় এড়াতে পারে না সরকার, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট
বর্তমান | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সরকারি অনুমোদনে পুরসভার কাজ হয়নি। এই অজুহাত দেখিয়ে সরকার দায় এড়াতে পারে না। দুই রাজনৈতিক দলের দুই পুর চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের মাঝে ‘স্যান্ডউইচ’ হওয়া ক্যান্সার আক্রান্ত এক ঠিকাদারের দায়ের করা মামলার রায়ে এটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট।
ঘটনার সূত্রপাত প্রায় ১০ বছর আগে ২০১৫ সালে। ওই সময় রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলের কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত। সেসময় পুরসভার অন্তর্গত এলাকার রাস্তা, স্কুল বিল্ডিং, হোস্টেল সহ একাধিক কাজের জন্য টেন্ডার নোটিস দেয় পুরসভা। টেন্ডারের সমস্ত শর্ত পূরণ করে কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদার নন্দলাল সাহা। তাঁর আইনজীবী গৌতম ঠাকুর জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত কাজ সময় মত কাজ শেষ করার পরও, টাকা পাননি তাঁর মক্কেল। ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জ পুরসভার কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড ভেঙে যায়। প্রশাসক হিসাবে পুরসভার দায়িত্ব পান রায়গঞ্জের এসডিও। এরপর প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়। অভিযোগ ছিল, পুর আইন অনুযায়ী তিনি সরকারের অনুমোদন না নিয়ে মোট ১৪টি টেন্ডার ডেকে ছিলেন। সেইসঙ্গে নন্দলাল বাবুর ৮০ লক্ষ টাকা আটকে দেয় পুরসভা।
এরমধ্যে ২০১৭ সালে রায়গঞ্জ পুরসভায় দায়িত্বে আসে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সন্দীপ বিশ্বাস। এরপরই নন্দলাল বাবুর করা কাজ নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য পুর দপ্তর। পুর ইঞ্জিনিয়াররা যাবতীয় কিছু অনুসন্ধান করে জানিয়ে দেয়, চুক্তি অনুযায়ী সঠিকভাবেই কাজ হয়েছে। গৌতম বাবুর অভিযোগ, এত কিছু সত্ত্বেও তাঁর মক্কেলের বকেয়া টাকা মেটায়নি পুরসভা। ইতিমধ্যে মোহিত সেনগুপ্তর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআরও খারিজ হয়ে যায়।
এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নন্দলাল বাবু। সেই মামলায় ২০২৩ সালে বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশে জানান, সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মামলাকারীর বকেয়া অর্থ পাওয়ার যোগ্য কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন পুরসভার প্রধান সচিব। সমস্ত কিছু যাচাইয়ের পর প্রধান সচিব জানিয়ে দেন, মামলাকারী বকেয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার যোগ্য। তবে পুরসভাকেই সেই অর্থ মিটিয়ে দিতে হবে। যেহেতু অনুমোদন নিয়ে কাজ হয়নি, তাই এব্যাপারে সরকার দায় নেবে না। এত কিছু সত্ত্বেও টাকা পাননি নন্দলালবাবু। এরপর মামলাটি আসে বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। দীর্ঘ শুনানির শেষে বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় রায়ে জানিয়েছেন, অনুমোদন না নিয়ে কাজ হয়ে থাকলেও, সরকার কোনওভাবেই দায় এড়াতে পারে না। দু’মাসের মধ্যে পুরসভা যাতে মামলাকারীর যাবতীয় বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেয়, তা পুর দপ্তরের প্রধান সচিবকেই নিশ্চিত করতে হবে।