এই সময়: পহেলগামে জঙ্গি হামলায় পর্যটকরা নিহত হওয়ার পর থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে অপারেশন চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। উধমপুরে জঙ্গিদের সঙ্গে তেমনই এক গুলির লড়াইতে শহিদ হয়েছেন বাংলার ছেলে, সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিহত–র পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা শনিবার বিকেলে ঘোষণা করেছেন।
নদিয়ার তেহট্টে শনিবার সকালে ঝন্টু আলি শেখের নিথর দেহ আসার পর জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, বিধায়ক তাপস সাহা, রুকবানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক এসএম সাদি, রমা বিশ্বাস, যুবনেতা শতরূপ ঘোষ গিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও শুক্রবার গিয়েছিলেন ঝন্টুর বাড়িতে। শনিবার দেহ আসার পরে নদিয়ার কংগ্রেস নেতারা তেহট্টে যান।
কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রথম সারির কোনও নেতাকে পাক সীমান্তে নিহত এই জওয়ানের বাড়িতে যেতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত জওয়ানের প্রতি বঙ্গ বিজেপির এই অবস্থান দেখে তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস একযোগে গেরুয়া শিবিরের তীব্র সমালোচনা করেছে।
যদিও বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘বিজেপির সব নেতার মুখ খুব পরিচিত নয়, সেই জন্য ওঁরা (বিরোধীপক্ষ) খুঁজে পাননি। বিজেপি তাঁকে (ঝন্টু আলি শেখ) বিজেপির মতো করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।’ বিজেপির দাবি, নদিয়ার স্থানীয় নেতৃত্বে নিহত জওয়ানের বাড়িতে গিয়েছিলেন, যদিও বঙ্গ বিজেপির অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে এই বিষয়ে রাত পর্যন্ত কোনও পোস্ট করা হয়নি।
ঝন্টু আলি শেখের শহিদ হওয়ার খবর আসার পরেও বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এই জওয়ানের প্রতি শোকজ্ঞাপনে অনীহা দেখা গিয়েছে বলে বিরোধীদের বক্তব্য। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন মুর্শিদাবাদে ছিলেন। বিধানসভায় বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, ‘ঝন্টু আলি শেখের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে দলের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। আমি কলকাতায় থাকলে নিশ্চিত যেতাম।’
নদিয়া জেলায় বিজেপির একাধিক বিধায়ক রয়েছেন। সেই বিধায়কদের কেউই এ দিন ঝন্টু আলি শেখের বাড়িতে যাননি। এঁদের মধ্যে চাকদার বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ এবং পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এ দিন রানাঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কর্মসূচিতে ছিলেন। সেখানে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারও ছিলেন। ঝন্টুর বাড়িকে কেন গেলেন না? বঙ্কিম ঘোষের বক্তব্য, ‘নদিয়ায় বিজেপির সব বিধায়ক এ দিন জেলায় ছিলেন না। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে রবিবার ঝন্টু আলি শেখের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’
গেরুয়া শিবিরের এই মনোভাব দেখে তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘বিজেপির রাষ্ট্রপ্রেম যে মেকি, তা প্রমাণিত হচ্ছে। এই দ্বিচারিতায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সব থেকে এগিয়ে। এই মুখোশধারী মেকি রাষ্ট্রপ্রেমিকদের জন্য কোনও নিন্দা যথেষ্ট নয়।’
অধীর চৌধুরী’র কথায়, ‘বিজেপি নেতারা যাবেন কেন? এটাই তাঁদের সংকীর্ণতা। ঝন্টু আলি শেখ দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন। তাঁকে শ্রদ্ধা না জানানোর থেকে দুর্ভাগ্যজনক কী হতে পারে।’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী’র বক্তব্য, ‘বিজেপি নেতারা ধর্ম খোঁজে। ওঁরা দেশরক্ষার লড়াই নয় জাতের, ধর্মের লড়াই নিয়ে বেশি আগ্রহী। তাই দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া শহিদকে ওঁরা শ্রদ্ধা জানাবে না।’