এই সময়, বাগদা: নিজেকে জাতীয় স্তরের দাবা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দিয়ে এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভাঙিয়ে বাগদা এলাকায় বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে দিনের পর দিন টাকা তুলছিল এক যুবক। দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য টাকা লাগবে, এ কথা বলে বাগদার বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা, পঞ্চায়েতের প্রধান এমনকী বিডিও–র কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল সে।
শেষ পর্যন্ত বিডিও–র অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে প্রকাশ রায় (৩৫) নামে ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করল বাগদা থানার পুলিশ। শনিবার ধৃতকে বনগাঁ আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত প্রকাশ রায়ের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা থানার আক্রমপুর এলাকায়। সে একেক জনের কাছে একেক রকম পরিচয় দিত। কখনও নিজেকে দাবা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিয় দিত। কখনও আবার বলত, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। বাড়ির ঠিকানাও সঠিক দিত না। কখনও বলেছে, বাড়ি বনগাঁতে। কখনও আবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা বলে দাবি করত। এর আগেও একটি প্রতারণা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেট।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিজেকে জাতীয় স্তরের দাবাড়ু হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাগদা ব্লকের বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল প্রকাশ। সবাইকে সে বলে বেড়াত, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার ভালো সখ্যতা রয়েছে। দরকার হলে সে নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের পরিচয় করিয়ে দেবে।
প্রকাশ এও জানিয়েছিল, দাবা টুর্নামেন্টের জন্য টাকা জোগাড় করতে অভিষেকই তাকে তৃণমূল নেতাদের কাছে যেতে বলেছেন। এ কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মাথাপিছু গড়ে ১০–২০ হাজার টাকা আদায় করেছিল প্রকাশ। একই কায়দায় বাগদার বিডিও–র কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে শেষে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন বাগদার বিডিও। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাগদা এলাকার বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা এবং পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছ থেকেও টাকা তুলেছে সে।
বিডিও–র অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে ওই যুবককে পাকড়াও করে পুলিশ। বাগদার বিডিও প্রসূণ প্রামাণিক বলেন, ‘উনি আমার কাছে দাবা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দাবার ভক্ত। ওনার সঙ্গে কথা বলে দাবার চাল সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনেছি। দাবার টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার উনি আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করে ওনার হাতে টাকা তুলে দিই। পরে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, আমার মতো আরও অনেকের কাছ থেকেই এ ভাবে টাকা তোলা হয়েছে। তখনই বুঝতে পারি, ওকে টাকা দেওয়াটা আমার ভুল হয়েছে। ছেলেটি একজন প্রতারক। তার পরে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করি।’
বাগদা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সর্দার বলেন, ‘প্রকাশ রায় নামে ওই যুবক বাগদায় এসে নিজেকে জাতীয় স্তরের দাবা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দেয়। ছেলেটি আমাকে বলেছিল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি ওকে পাঠিয়েছে। আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল। যদিও আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি একটি টাকাও দিইনি। কিন্তু আমার দলের কিছু নেতা ওর কথায় বিশ্বাস করে টাকা তুলে দিয়েছে। দলের প্রিয় নেতার নাম শুনে তাঁরা ওকে বিশ্বাস করেছিল।
সেজন্য অনেক তৃণমূল নেতা বিশ্বাস করে ছেলেটির হাতে টাকা তুলে দিয়েছে। পরে জানা যায়, সমস্তটাই মিথ্যা। বাগদার বিডিও ছেলেটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। সেই মতো পুলিশ ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করেছে।’ তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘পার্টির বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ছেলেটি প্রায় ৫০–৬০ হাজার টাকা তুলেছে। টাকার পরিমাণটা আরও বেশি হতে পারে। সেটা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।’