মুর্শিদাবাদে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, প্রস্তুতি শুরু প্রশাসনিক মহলে
আজকাল | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার অন্তর্গত সুতি এবং সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে নিজের প্রতিশ্রুতি মতো আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলার আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
সম্প্রতি মেদিনীপুরে একটি প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলায় যাবেন। তারপরেই তাঁর জেলা সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহল এবং তৃণমূল দলের মধ্যে। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে তিনি সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান এবং আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে যেতে পারেন। সেইমতো প্রশাসনিক মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার এক শীর্ষ পদাধিকারী জানান,' প্রাথমিকভাবে আমাদেরকে জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী আগামী ৪ অথবা ৫ মে হেলিকপ্টার করে সামশেরগঞ্জে এসে নামবেন। তারপর তিনি ধুলিয়ান পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে এবং আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে যেতে পারেন।' তবে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসার আগেই প্রশাসনের তরফ থেকে সাম্প্রতিক হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি এবং দোকানের তালিকা তৈরির কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে সামশেরগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বাড়ি মেরামত করার জন্য টিন, পাইপ, লোহার রড এবং ১০ বস্তা করে সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। সরকারি সাহায্য পাওয়ার পর ইতিমধ্যে সামশেরগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় মানুষ নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করার কাজও শুরু করেছেন।
ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন,' মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন তিনি সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান এলাকায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আসবেন। আমাদের তরফ থেকেও সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।' তৃণমূল বিধায়ক জানান,' মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে 'বাংলার বাড়ি' আবাস যোজনায় সাহায্য করা হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি সারানোর জন্য বেশ কিছু সাহায্য করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে প্রায় ৪৫০ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং দোকানদারকে সাহায্য করার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও এলাকার বিশিষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা যে আর্থিক তহবিল তৈরি করেছেন সেখান থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের হাতে ইতিমধ্যেই বড় অঙ্কের আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছি।' তৃণমূল সূত্রের খবর, ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় ১৫-২০টি বড় দোকান এবং প্রায় ৫০টি ছোট দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই দোকানগুলি সারিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য তৃণমূল দলের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে দোকান মালিকদের বিনা সুদে টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আবেদন রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি মুর্শিদাবাদে হিংসার সময় নিহতদের পরিবারের একজনের চাকরির আবেদনও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের সচিব পদ মর্যাদার অফিসার পিবি সেলিম নিজে মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এবং দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা তৈরির কাজ নিজে তদারকি করেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার এক শীর্ষ নেতা বলেন, দলীয় পতাকাকে পাশে রেখে জঙ্গিপুরের কয়েকজন শীর্ষ নেতা এবং বিড়ি ব্যবসায়ী যে তহবিল তৈরি করেছেন সেখান থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় তিন কোটি টাকার সাহায্য ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে। আরও বেশ কিছু পরিবার এবং দোকান মালিককে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেছেন ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান সহ আরও কয়েকজন।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরের সভা থেকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেই অনুযায়ী সামশেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের জন্য বিশেষ কোনও প্রকল্প বা পরিকল্পনার কথা মুর্শিদাবাদ সফরে ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।