দিঘার মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে দুগ্ধস্নান জগন্নাথদেবের, চলছে হোমযজ্ঞ
প্রতিদিন | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার, কাঁথি: প্রাণপ্রতিষ্ঠার বাকি তিনদিন। তার আগে চলছে যজ্ঞ-আচার-অনুষ্ঠান। শুক্রবার মন্দির প্রাঙ্গণে তৈরি হওয়া অস্থায়ী আটচালা ঘরে ১২ লিটার দুধ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনকে স্নান করানো হল। পাশাপাশি স্নান করানো হয় মন্দিরে থাকা বিমলা, লক্ষ্মী, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদবীকে।
এদিন সকাল থেকে পুরীর মন্দিরের রাজেশ দৈতাপতির নেতৃত্বে শুরু হয় হোমযজ্ঞ। চারদিকে চারটি হোমকুণ্ড এবং মাঝে মহাকুণ্ডে হোমাগ্নি জ্বলে। পাশাপাশি গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাকে আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে এদিন ২৫ জন মহিলা কলস নিয়ে গর্ভগৃহ প্রদক্ষিণ করেন। মহাযজ্ঞ রয়েছে ২৯ এপ্রিল। মহাযজ্ঞের দিন পর্যন্ত দৈনিক হোম যজ্ঞ চলবে।
৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মন্দিরের দ্বারোদঘাটন এবং জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী ২৮ এপ্রিল দিঘায় পৌঁছতে পারেন। এদিন মহাযজ্ঞের আগে দিঘাকে সুদৃশ্য আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি নিজে তদারকি করছেন পুরো বিষয়টির। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আঁটসাঁট করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সৈকত শহরে মেগা ইভেন্ট হিট হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের গঠনশৈলী থেকে পুজো, ভোগ সব কিছুই হচ্ছে পুরীর মন্দিরের আদলে। পুরীর মতোই দিঘার জগন্নাথ মন্দির কলিঙ্গ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হতে চলেছে।
জানা গিয়েছে, এই মন্দির এবং অযোধ্যার রামমন্দির, দু’টিই ‘সম্পরা’ ঘরানায়, রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে। প্রায় ৮০০ কারিগর দিঘায় এসেছিলেন মন্দির নির্মাণের কাজে। তাঁরা মূলত রাজস্থানের বাসিন্দা। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রধানদ্বার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই প্রথমে পড়বে তিনটি দীপস্তম্ভ। পুরীর মতো দিঘার মূল মন্দিরে প্রবেশের জন্য রয়েছে চারটি দ্বার। একই ভাবে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বার বা মন্দিরের প্রবেশদ্বারের সামনে রয়েছে কালো রঙের অরুণা স্তম্ভ। পুরীর মন্দিরের আদলে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের সামনে কালো পাথরে তৈরি ৩৪ ফুট লম্বা ১৮ মুখী অরুণা স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। আর এই স্তম্ভের মাথায় রয়েছে অরুণার মূর্তি। অরুণা স্তম্ভের সামনের সিংহদ্বারে ঢুকলেই পুরীর মতোই সোজাসুজি জগন্নাথের মূর্তি দেখতে পাওয়া যাবে। পূর্বদিকের মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার বা সিংহদ্বারের বিপরীতে থাকছে ব্যাঘ্রদ্বার। উত্তরে হস্তীদ্বার আর দক্ষিণে অশ্বদ্বার। দিঘার মন্দিরের প্রথমে রয়েছে ভোগমণ্ডপ। ভোগমণ্ডপের চারটি দরজা।
তারপরে রয়েছে ১৬টি স্তম্ভের উপরে নাটমন্দির। নাটমন্দিরের পরে চারটি স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে জগমোহন। জগমোহনের পরে গর্ভগৃহ বা মূল মন্দির। সেখানে সিংহাসনে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। ভোগমণ্ডপ ও নাটমন্দিরের মাঝে রয়েছে গরুড় স্তম্ভ। নাটমন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে কালো পাথরে তৈরি ছোট ছোট দশাবতার মূর্তি। মন্দিরের পাথরের দেওয়ালেও রয়েছে অসংখ্য কারুকার্য। পুরীর মতো নিয়ম করে দৈনিক মন্দিরের চূড়ায় ধ্বজা পরিবর্তন করা হবে।