নিয়োগ আটকানোই লক্ষ্য বামেদের! ছবি দেখিয়ে সিপিএমের দ্বিচারিতা ফাঁস চাকরিপ্রার্থীদের
প্রতিদিন | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: সিপিএমের দ্বিচারিতা ফাঁস করে দিলেন শারীরশিক্ষা-কর্মশিক্ষা চাকরিপ্রার্থীরা। যোগ্য বলে চাকরির দাবিতে এক সময় তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে নগদে ২৭ লক্ষ টাকা নিয়ে মামলা লড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে সরব হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিএম সাংসদ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীরা। সেই তাঁরাই চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি হয়ে যেতেই আবার অন্যের কাছে টাকা নিয়ে তাঁদের চাকরি আটকাতে মামলা লড়েছেন। সিপিএম যে কতটা দ্বিচারী তার প্রমাণস্বরূপ সেই সময় আন্দোলনকারীদের মঞ্চে থাকা নেতাদের ছবি ফাঁস করে দিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই সব ছবি এদিন নিজের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকেও সামনে আনেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে সিপিএম সাংসদ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যর ভণ্ডামিকে রাস্তায় এনে দাঁড় করিয়েছেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। সিপিএমের সেই দ্বিচারিতাই তুলে ধরে মুখোশ খুলে দেন কুণাল।
শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা অভিযোগ, শুক্রবার শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গুন্ডা লেলিয়ে দেন বিকাশ আর তাঁর শাগরেদ ফিরদৌস শামিমরা। নিয়োগ আটকে রাখা হচ্ছে বলে চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। গুন্ডা দিয়ে মার খাইয়ে তাঁদের মাথা-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, দ্বিচারিতা ধরা পড়ে যাওয়ায় সিপিএম গুন্ডামির আশ্রয় নিল। তার পরই এক সময় তাঁদের আন্দোলনমঞ্চে গিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তাঁদের হয়ে নগদের বিনিময়ে মামলা। লড়ার পুরনো ছবি সামনে এনে দেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, এখন রাজ্য সরকার যেখানে চাকরিতে তাঁদের নিয়োগের অর্ডার দিয়েছে, স্কুল ঠিক করে দিয়েছে, তার পর নতুন করে অন্য পক্ষের কাছে টাকা নিয়ে মামলা করে চাকরি আটকাতে চাইছেন সিপিএমের বিকাশ-শামিমরা। এক সময় বিপদে পড়ে কুণালের কাছে নিজেদের কথা জানান চাকরিপ্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। শেষে জটিলতা কাটে। তাঁদের নিয়োগের পথ সুগম হয়। তার পরই নতুন করে মামলা করে নতুন করে জট তৈরি করেছে সিপিএম।
এই পরিস্থিতিতেই সিপিএমের দ্বিচারিতা ফাঁস করেন চাকরিপ্রার্থীরা। সমাজমাধ্যমে কুণাল সেই সব ছবি পোস্ট করেন। সেখানেই সিপিএম নেতাদের মুখোশ খুলে দিয়ে লেখেন, ‘সিপিএমের ধান্দাবাজি আর দ্বিচারিতা দেখুন। এই সব এসএলএসটি শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীরা যোগ্য। চাকরি চাই বলে এঁদের আন্দোলনেও ছিল সিপিএম। ওঁদের উকিলরা বিপুল টাকাও নিয়েছেন বলে অভিযোগ। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জেনে যখন এঁদের চাকরির ব্যবস্থা করলেন, স্কুল পেলেন এঁরা, তখন এই সিপিএমই এঁদের চাকরি আটকে কোর্টে জটিলতা তৈরি করছে। এঁদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া আইনজীবী-নেতারাই এখন এঁদের চাকরির বিরোধিতা করছেন।’ শুক্রবারের ক্ষোভ আর উত্তেজনা এই জায়গা থেকেই। কুণাল লিখেছেন, ‘সেখানে ধানে সিপিএমের দোসর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম চেঁচালেন, মমতাকে ডেকে আন। এই শামিমরা একসময় ওঁদের মঞ্চে ছিলেন। এই হল দু’মুখো সাপ সিপিএম।’
কুণাল যে ছবিগুলি পোস্ট করেছেন তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটিতে আন্দোলনকারীদের মঞ্চে সেলিম, আরেকটিতে সুজন। আরও একটি ছবিতে আন্দোলনকারীদের মঞ্চে আজ এঁদেরই চাকরির বিরোধিতা করে মামলা লড়া সিপিএম সাংসদ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। কুণাল লেখেন, ‘ছবিগুলো দেখুন। ওই কর্মপ্রার্থীদের জিজ্ঞেস করুন। আদালত ন্যায়বিচার দেয়নি। পক্ষপাতদুষ্ট কাজ চলছে। বিচারে আস্থা থাকুক, সেই আস্থা রাখার দায়িত্ব বিচারপতিরও।’ এর পরই বিজেপি সাংসদ প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম না করে কটাক্ষ করে বলেন, ‘কে যে কখন ইস্তফা দিয়ে কোন দলের এমপি হতে গেলেন, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা তো রয়েছে!’
কুণালের দাবি, অবিলম্বে এঁদের নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে চাকরির স্থগিতাদেশ তুলে চাকরি করতে দেওয়া হোক এই চাকরিপ্রার্থীদের। তাঁর কথায়, ‘এঁরা যোগ্য। এঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই নেই। সিপিএমের আইনি ছোবলে এতগুলি প্রার্থীর জীবন বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। সিপিএম চাকরি খাবার রাজনীতি করছে এঁদের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করুন, তাহলে এঁদের মঞ্চে ওঁরা নাটক করতে গিয়েছিলেন কেন?’