কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার পরে বিজেপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তরজা আরও তীব্র হল। দু’পক্ষই শনিবারও আলাদা ভাবে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছে। তারই মধ্যে উধমপুরে নিহত সেনা কমান্ডো ঝন্টু আলি শেখকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়ি নদিয়ার তেহট্টে বিজেপি নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি কেন, সেই প্রশ্ন তুলে তীব্র কটাক্ষ করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। বিজেপি যদিও একে ‘অপপ্রচার’ বলে পাল্টা সরব হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কাশ্মীরের ঘটনার জন্য সেখানকার ন্যাশনাল কনফারেন্স দলকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, “যত দিন রাষ্ট্রপতি শাসন ছিল, পাথর ছোড়া ৮০% কমে গিয়েছিল। নির্বাচনে জিতে নতুন সরকার এল ওখানে। তারা নতুন পিকনিক স্পট খুলে দিল, সেনাবাহিনীকে জানাল না!” অসম সরকারের ‘উদাহরণ’ সামনে রেখে এই রাজ্যেও জঙ্গি-হানা নিয়ে সমাজমাধ্যমে কেউ ‘মজা’ করলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুকান্ত।
নিরাপত্তার অভাবের প্রশ্নটিকেই ফের সামনে এনে পাল্টা কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের বক্তব্য, “কাশ্মীরের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নিজেদের দায় এড়াতে মোদী সরকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরা ‘ট্যুর এজেন্ট’দের দায়ী করছেন। ধিক্কার জানাই।” নিরাপত্তার প্রশ্নে বিজেপিকে বিঁধেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, “পহেলগামের ঘটনার কয়েক দিন আগে গুলমার্গে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের ২৫তম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বিরাট সংখ্যক রক্ষী নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু পর্যটকদের কোনও নিরাপত্তা ছিল না।” এই সূত্রেই জঙ্গি হামলার দু’দিনের মধ্যেই অভিযানে গিয়ে নিহত বাঙালি কমান্ডো ঝন্টুকে শ্রদ্ধা জানাতে বিজেপি নেতাদের কেন দেখা যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভঙ্কর। দেশরক্ষার লড়াই ‘এককাট্টা হয়েই হবে’, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, “ভাইয়ের শেষকৃত্যের সময়ে ঝন্টুর দাদা যা বলেছেন, তাতেই সব জবাব আছে। ধর্ম নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁদের এই কথা বোঝার যোগ্যতা আছে কি?”
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা বক্তব্য, “অপপ্রচার। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব তেহট্টে গিয়েছিলেন। খুব দ্রুত শীর্ষ নেতারাও যাবেন। শহিদের ধর্ম হয় না। যাঁরা বিএসএফকে ধর্ষক বলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তাঁদের থেকে বিজেপিকে দেশপ্রেম শিখতে হবে না।”
ঝন্টুর দেহ তাঁর তেহট্টের বাড়িতে পৌঁছনোর পরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র-সহ দলের নেতারা। সিপিএমের প্রতিনিধিদলও তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল। কলকাতা বিমানবন্দরে এবং তেহট্টে ঝন্টুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারাও। পহেলগামের ঘটনা নিয়ে গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চা দক্ষিণ কলকাতায় মিছিল করেছে। নেতৃত্বে ছিলেন মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ। পাশাপাশি, মেটিয়াবুরুজ থানার সামনে থেকে ফতেহপুর বাজার পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করেছে কংগ্রেস। ছিলেন দলের নেতা মহম্মদ মোক্তার, সুমন পাল প্রমুখ।