সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়। এঁদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কত পুরোনো অপরাধী। পুলিশের খাতায় যাদের নাম–নথি সব আছে। সিসিটিভি–র মাধ্যমে তাদের দেখা গেলেও, পুরোনো রেকর্ড মিলিয়ে সেই অপরাধীকে শনাক্ত করা সে ভাবে সম্ভব হয় না সব সময়ে। সেই সমস্যার সমাধানেই এ বার এগিয়ে এলো রেল বিভাগ। কয়েকদিন আগে হাওড়া স্টেশন থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় এক শিশুকে চুরি করে ভিন রাজ্যে পাচার করে দেয় এক মহিলা।
এই হাওড়া স্টেশনকে ট্রানজ়িট পয়েন্ট করে মাঝেমধ্যেই এ রকম নানা অপরাধের ঘটনা ঘটে। হাওড়া স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১১ লক্ষ যাত্রী চলাচল করেন। এই বিপুল পরিমাণ যাত্রীর মধ্য থেকে অপরাধী খুঁজে বের করা খুবই মুশকিল হয় রেল পুলিশের পক্ষে। পুরোনো আমলের সিসিটিভি ক্যামেরায় ছবি দেখা গেলেও, অপরাধী চিহ্নিত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ বার হাওড়া স্টেশন চত্বরে ও হাওড়া ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে অপরাধীদের রুখতে ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা বসাচ্ছে রেল বিভাগ। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কুমার জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রায় শ’তিনেক ক্যামেরা রয়েছে হাওড়া স্টেশন চত্বরে।
এতে হাওড়া স্টেশন চত্বরে অপরাধ সংগঠিত হলে, তা সিসিটিভিতে অনেকটাই চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এত লক্ষ মানুষের ভিড়ে যদি কোনও অপরাধী ঘুরে বেড়ায়, তাকে যাতে সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, সেই জন্যই এই ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে হাওড়া স্টেশন চত্বরে যে সব সিসিটিভি রয়েছে, সেগুলি কোনওটা ফিক্স ক্যামেরা, আবার কোনওটা জ়ুম ইন, জ়ুম আউট করা যায়। কিন্তু আলাদা করে ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা বসানো হলে, তার মাধ্যমে অপরাধী বা সন্দেহজনক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে অনেকটাই সহজ হবে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে (এআই) কাজে লাগিয়ে এই ফেস রিকগনিশন ক্যামেরাগুলি অপারেট করা হবে। সেখানে অপরাধীদের একটা ডেটাও থাকবে, যাতে সহজে সেই অপরাধীকে চিহ্নিত করা যায়। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে হাওড়া স্টেশনে ঘুমন্ত অবস্থায় যে শিশুটিকে চুরি করে ভিন রাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনার তদন্তে নেমেও একের পর এক সিসি ক্যামেরায় ওই অপরাধীকে ফলো করে, তাকে হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনায় যারা জড়িত ছিল, তাদের সকলকে চিহ্নিত করা এবং রাজস্থান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে আনা হয়।
এ ভাবে অপরাধী চিহ্নিত করতে সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। অন্য দিকে, কয়েক মাস আগে হাওড়া স্টেশনের বাইরে, পার্সেল গুদামের কাছে মহিলাকে ছুরি দিয়ে খুন করার যে ঘটনা ঘটে, তার ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় পাওয়া যায়নি। কারণ, ওই এলাকায় তখন সিসি ক্যামেরা ছিল না। এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে রেলের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে, শুধু হাওড়া স্টেশন চত্বরে নয়, স্টেশনের আশপাশে এবং হাওড়া ডিভিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে এই ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা বসানো হবে। এই উদ্যোগে খুশি যাত্রীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, হাওড়া স্টেশনকে কেন্দ্র করে যে ভাবে একের পর এক পাচার বা অপরাধের ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে এই ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা বসানো হলে, তা অনেকটাই কাজে আসবে এবং হাওড়া স্টেশন চত্বরকে অপরাধমুক্ত করা যাবে।